ইলা মিত্র
ইলা মিত্র (১৯২৫-২০০২) অধ্যাপক, সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২৫ সালের ১৮ই অক্টোবর কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেথুন স্কুল ও কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (১৯৪০), ইন্টারমিডিয়েট (১৯৪২) ও বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (অনার্স) পাস করেন (১৯৪৪)। ১৮ বছর বয়সে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যােগদান করেন (১৯৪৩) এবং দুর্ভিক্ষকালীন খাদ্য আন্দোলন ও ভুখামিছিলে যােগদান করে লজারখানা পরিচালনায় সহায়তা করেন (১৯৪৫)। স্বামী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে পূর্ববঙ্গে এসে তিনি কৃষক আন্দোলন, জমিদারি উচ্ছেদ ও জোতদারি শােষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নােয়াখালী জেলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন (১৯৪৬)। তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন (১৯৪৬৫০) এবং কারারুদ্ধ হন (১৯৫০)। পরবর্তীকালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে (১৯৫৭) কোলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনায় যােগ দেন (১৯৫৭)। তিনি মানিকতলা নির্বাচনি এলাকা থেকে চারবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৬২-৭৮)। তিনি বেশ কয়েকটি রুশ গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘তাম্রপত্র’ পদকে ভূষিত হন (১৯৭২)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ইলা মিত্র অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয় ছিল বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বুদ্ধিজীবী ও শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আয়ােজিত প্রথম সভায় তিনি ভাষণ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযােগিতার জোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভারতের বামপন্থী শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তার যােগাযােগের সুবাদে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভারতের বামপন্থীদের সংগঠিত করেন। ২০০২ সালের ১৩ই অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ ইলা মিত্র-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড