ইন্দ্রপােল গণহত্যা
ইন্দ্রপােল গণহত্যা (পটিয়া, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১১ই ডিসেম্বর। পাকবাহিনী এ হত্যাকাণ্ড চালায়।
১০ই ডিসেম্বর রাত থেকে কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদীর নির্দেশে একদল মুক্তিযােদ্ধা ইন্দ্রপােল এলাকার সেতুর পূর্বদক্ষিণে এম্বুশে ছিলেন। তাঁরা সেতুর পূর্ব প্রান্তের দক্ষিণ পাশে পটিয়া উপজেলার ছনহারা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির আহ্বায়ক মনির আহমদ চৌধুরীর খালি ভবনে ১টি এলএমজিও স্থাপন করেছিলেন। ১১ই ডিসেম্বর দুপুরে পাকিস্তানি বাহিনী ইন্দ্রপােল এলাকায় এলে মুক্তিযােদ্ধারা ভয়াবহ আক্রমণ রচনা করেন। তাঁরা এ-যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর তুলনায় মুক্তিযােদ্ধাদের জনবল ও অস্ত্র অপ্রতুল হওয়ায় তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হন। মুক্তিযােদ্ধারা পিছু হটলে পাকিস্তানি বাহিনী ভয়ানক প্রতিশােধপরায়ণ হয়ে ইন্দ্রপােল এলাকায় আক্রমণ শুরু করে। তারা মুক্তিযােদ্ধাদের ফেলে যাওয়া একটি এলএমজি হস্তগত করে। এই এলএমজি থেকে তারা। ইন্দ্রপােল এলাকার চতুর্দিকে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। তাতে প্রচুর গাছ-গাছালি আঁজরা হয়ে যায়। তারা ব্যাপকভাবে মর্টার নিক্ষেপ ও শেলিং করে বিকেল পর্যন্ত ২৭ জন লােককে হত্যা ও কতিপয় নারীকে ধর্ষণ করে। শহীদদের মধ্যে সেতুর পশ্চিমে আল্লাই কাগজিপাড়ার দোকানপাড়ে ৩ জন, সেতুর পূর্ব পাশে আরাকান সড়কের ওপর ৫ জন, সেতুর পূর্ব-দক্ষিণ দিকের ধানক্ষেতে ৩ জন, সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে আরাকান সড়কের দুপাশে অবস্থিত লবণ পরিশােধন মিলসমূহে ১৫ জন ও খাসমহালে ১ জনকে হত্যা করা হয়। আরাকান সড়কের ওপর যে ৫ জনকে হত্যা করা হয়, তারা সেতুর পূর্ব প্রান্তের দক্ষিণ পাশে বশরের চায়ের দোকানে ছিল। ইন্দ্রপােল গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- শাখাওয়াৎ ওরফে শাকেত (বরিশাল; পটিয়ার ফুড ইন্সপেক্টর), জেবর মুলুক (আল্লাই, পটিয়া), মফজল আহমদ (পিতা আবদুস সােবহান, আল্লাই ওখাড়া, পটিয়া), বদরুল হক (পিতা নুরুল হক, গােবিন্দারখীল মল্লর বাড়ি, পটিয়া পৌরসভা) ও বিনােদিনী চৌধুরী (স্বামী বরদাচরণ চৌধুরী, খাসমহাল, পটিয়া)।
ধর্ষিতা নারীদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়। একজন এলাকায় খালেকের মা হিসেবে পরিচিত, অপরজন একই বাড়ির আয়শা খাতুন।
গণহত্যা ও নারীনির্যাতন ছাড়াও পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে আরাকান সড়কের দুপাশে অবস্থিত লবণ পরিশােধনের সব মিলস এবং সেতুর পূর্ব প্রান্তের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত সব দোকান ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা গ্যামাক্সিন পাউডারের একটি গােডাউন পুড়িয়ে দেয়ায় ইন্দ্রপােল তথা পুরাে পটিয়া সদর এলাকা দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। লবণ পরিশােধনের মিলসমূহের সঙ্গে ১৫ জন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারা ছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালি ও মহেশখালির অধিবাসী এবং মিলসমূহের শ্রমিক। শহীদ ৫ জনের লাশ সড়কের পাশে অবস্থিত দোকান ও বাড়িঘরের আগুনে অনেকটা পুড়ে যায়। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড