বীর প্রতীক আশরাফ আলী খান
আশরাফ আলী খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা ও হেভি মেশিনগান চালক। তিনি ১৯৫০ সালের ১৭ই জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চট্টিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মােমিন খান মােজাহেদী এবং মাতার নাম মরিয়ম খানম।
আশরাফ আলী খান ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। পরিবারের হাল ধরতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আশরাফ আলী খান ১৯৭০ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে যােগ দেন। সেনাবাহিনীতে চাকরিকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বৈষম্যনীতি তিনি গভীরভাবে লক্ষ করেন। বিষয়টি তাঁর মনে দাগ কাটে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি যশাের সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ৩০শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক যশাের সেনানিবাস আক্রান্ত হলে শতাধিক বাঙালি সৈনিক তাতে হতাহত হন। এসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশরাফ আলী খান অন্য কয়েকজন সহকর্মীসহ সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে যশােরের চৌগাছায় মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আশরাফ আলী খান প্রথমদিকে ১নং সেক্টরে এবং পরবর্তী সময়ে ‘জেড’ ফোর্সের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটের গৌরীপুর, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার কোদালকাঠী, কামালপুর প্রভৃতি যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন। সিলেটের কানাইঘাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানির ক্যাম্প ছিল। ২২শে নভেম্বর সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে গৌরীপুরে মুক্তিযােদ্ধাদের অগ্রবর্তী একটি দল অবস্থান নেয়। এ দলে আশরাফ আলী খান ছিলেন হেভি মেশিনগান চালক। ক্যাম্পের পাকিস্তানি সৈন্যরা আকস্মিকভাবে তাদের ডিফেন্স ছেড়ে মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। অতর্কিত এ আক্রমণে মুক্তিযােদ্ধারা কিছুটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন। দ্রুত বিপর্যয় কাটিয়ে তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে হানাদার বাহিনীকে মােকাবেলা করতে থাকেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব শহীদ হন। তাঁর স্থলে কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকত। তিনি হানাদার বাহিনীর গুলিতে আহত হন। ভয়াবহ এ-যুদ্ধের শেষদিকে আশরাফ আলী খান আহত হন। দুটি বুলেট তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস, মনােবল ও রণনৈপুণ্যের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয়। তারা গৌরীপুর থেকে পালিয়ে তাদের কানাইঘাট ডিফেন্সে অবস্থান নেয়। এদিকে আশরাফ আলী খান ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আশরাফ আলী খান-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। ১৯৮৮ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রীর নাম মােছা. জেবুন নাহার। এ দম্পতি ৩ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড