বীর প্রতীক আলমগীর করিম
আলমগীর করিম, বীর প্রতীক (১৯৫২-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ২১শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. আব্দুল করিম এবং মাতার নাম সাহানা বেগম। আলমগীর করিম এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে বিএ ক্লাসের ছাত্র থাকাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন।
স্কুল পর্যায়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় আলমগীর করিম রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহ্বানে সারাদেশে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যােগ দেন। ২৫শে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সর্বত্র দখল প্রতিষ্ঠা করলে আলমগীর করিম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১১ই এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান। আগরতলার মেলাঘরে গিয়ে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যােগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কসবা এলাকায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। নভেম্বর মাসে আলমগীর করিমের দল কসবা থানার শিমরাইল গ্রামে অবস্থান নেয়। এ খবর পেয়ে ৭ই নভেম্বর পাকসেনাদের একটি দল তাদের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। ৮ই নভেম্বর পাকসেনারা আবার মুক্তিযােদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। আলমগীর করিম ও তাঁর সহযােদ্ধারা গ্রামের একটি পথে এম্বুশে ছিলেন। নৌকায় করে আসা পাকসেনারা তাদের এম্বুশে পড়ে আক্রান্ত হয়। এ আক্রমণে তাদের অনেকে হতাহত হয়। তারা অস্ত্রভর্তি নৌকা ফেলে পালিয়ে যায়। আলমগীর করিম পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া নৌকা ও অস্ত্রের দখল নিতে গিয়ে তাদের ছােড়া গুলি বুকে বিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। চিকিৎসার জন্য ভারতে নেয়ার সময় পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শিমরাইল গ্রামের স্কুল মাঠে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আলমগীর করিমকে বীর প্রতীক’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আখাউড়ার সড়ক বাজার থেকে মসজিদ পাড়া পর্যন্ত রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ আলমগীর করিম সড়ক’। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড