বীর প্রতীক আলী আকবর আকন
আলী আকবর আকন, বীর প্রতীক (১৯৪০-২০১২) অনারারি ক্যাপ্টেন ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালের ১৬ই মার্চ পিরােজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দক্ষিণ ভাণ্ডারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আচমত আলী আকন এবং মাতার নাম আমেনা খাতুন। ৩ ভাই ও ১ বােনের মধ্যে আলী আকবর আকন ছিলেন তৃতীয়। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্ব থেকেই সৈয়দপুর সেনানিবাসের ভেতরে একটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। হঠাৎ করেই অবাঙালি সেনারা বাঙালি সেনাদের এড়িয়ে চলতে শুরু করে, যদিও সেনানিবাসে বাঙালি সেনাদের সংখ্যাই ছিল বেশি। বাঙালিদের মধ্যে হাতেগােনা কয়েকজন অফিসার ছিলেন। অবাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের গতিবিধিও ছিল সন্দেহজনক। এমতাবস্থায় আলী আকবর আকনসহ কয়েকজন সৈনিক বাঙালি সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আনােয়ার হােসেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের করণীয় সম্বন্ধে আলােচনা করেন। অতঃপর তারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে একযােগে অবাঙালি সেনাদের আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার পূর্বেই ৩১শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার্স কোর্স ও ৩৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট গােলন্দাজ বাহিনী আতর্কিতভাবে আলী আকবর আকনদের ওপর আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন আনােয়ার হােসেনের নেতৃত্বে আলী আকবর আকনসহ বাঙালি সেনাসদস্যরাও পাল্টা আক্রমণ চালান। দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। এতে বেশ কয়েকজন প্রতিরােধযােদ্ধা শহীদ ও আহত হন। ১লা এপ্রিল সকালে গােলাগুলির মাত্রা কমে আসে। সন্ধ্যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুনরায় আক্রমণ চালাতে পারে ভেবে আলী আকবর আকন তার সহযােদ্ধাদের গােলাবারুদ সংগ্রহ করে প্রস্তুত থাকতে বলেন। বিকেল ৫টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা পুনরায় তৎপর হয়ে ওঠে। এ-সময় তাদের ছােড়া গুলিতে আলী আকবর আকন মারাত্মকভাবে আহত হন। অতিকষ্টে তিনি পালিয়ে গিয়ে বদরগঞ্জে সহযােদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আলী আকবর আকন ভারতে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। যুদ্ধকালে তিনি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আলী আকবর আকনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৮৬ সালের ১২ই এপ্রিল সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের কয়েক মাস পূর্বে অনারারি ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পান। তাঁর স্ত্রীর নাম হাসিনা খানম। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনকজননী। ২০১২ সালের ২৬শে জানুয়ারি মুক্তিযােদ্ধা আলী আকবর আকন মৃত্যুবরণ করেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড