আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক অপারেশন
আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর) পরিচালিত হয় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে। চট্টগ্রাম শহরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে অবস্থিত আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে পরিচালিত এ অপারেশনের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন সরকারের অবস্থানের প্রতিবাদ এবং যুদ্ধের প্রয়ােজনে অর্থ সংগ্রহ করা। অপারেশনের পরিকল্পনা করেন মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, মােহাম্মদ হারেস, জালাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। দুঃসাহসী মুক্তিযােদ্ধা এনামুল হক দানুর নেতৃত্বে পরিচালিত এ অপারেশনে অংশ নেন আব্দুল্লাহ-আল-হারুন (ছাত্রলীগ নেতা ও সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম কারিগরি ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদ), আজিজ (বাইরের জেলার), ডা. জাফরউল্লাহ (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা), অমল মিত্র (ছাত্রলীগ কর্মী), শফিউল বশর (চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা), ফজলুল হক, ফখরুল ইসলাম মনি (চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র), আবদুল বারেক (ড্রাইভার), আমির হােসেন (ড্রাইভার) প্রমুখ মুক্তিযােদ্ধা। আগ্রাবাদ হােন্ডা প্যালেসের মালিক নুরুল ইসলাম (যিনি নিজেই একজন মুক্তিযােদ্ধা এবং বর্তমানে জাপানের অনারারি কনসাল) এ অপারেশন পরিচালনায় শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর অফিসে বসেই সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়।
মুক্তিযােদ্ধারা রাস্তা থেকে একটি জিপ হাইজ্যাক করে অপারেশনের দিন সকাল দশটায় ব্যাংকে পৌছান। তারপর ডাকাতের বেশে ব্যাংকে ঢুকে তাঁরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে ১৭,০০০ টাকা হস্তগত করেন। মাত্র ১১ মিনিটে পুরাে অপারেশন শেষ হয়। প্রথমে তাদের ডাকাত মনে হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা মুক্তিযােদ্ধা।
মার্কিন মালিকানাধীন একটি ব্যাংকে আগ্রাবাদের মতাে জায়গায় এ-রকম একটি অপারেশন সফলভাবে পরিচালনা করতে পারায় মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল বৃদ্ধি পায় এবং এ ঘটনা পাকস্তানি সামরিক জান্তার জন্য একটি বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়। [সাখাওয়াত হােসেন মজনু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড