You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম আমিন উল্লাহ শেখ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম আমিন উল্লাহ শেখ

আমিন উল্লাহ শেখ, বীর বিক্রম (১৯৩৬-১৯৯৯) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৩৬ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নােয়াব আলী শেখ এবং মাতার নাম মাহমুদা খাতুন। আমিন উল্লাহ শেখ পাইকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং পাইকপাড়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি তার এলাকার মধ্যে প্রথম ম্যাট্রিক পাশ। এজন্য তিনি এলাকায় ‘মাস্টার সাব’ বলে পরিচিত ছিলেন। ফরিদগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে তিনি এইচএসসি পাশ করেন।
আমিন উল্লাহ শেখ ১৯৫৫ সালে ইলেকট্রিক আর্টিফিশার (ইএ) পদে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যােগ দেন। তিনি করাচিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ষাট দশকের শেষদিকে পাকিস্তান ফ্রান্স থেকে একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন ক্রয় করে। এ সাবমেরিনের নাম ‘পিএনএস ম্যানগ্রো’। এতে আমিন উল্লাহ শেখ-কে পদায়ন করা হয়। পিএনএস ম্যানগ্রো পরিচালনা বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে ফ্রান্সে পাঠানাে হয়। ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে তিনি অন্য আরাে কয়েকজন সাবমেরিনার-সহ ফ্রান্স থেকে পালিয়ে ইউরােপের বিভিন্ন দেশ হয়ে ভারতে আসেন। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাস তাদের বিশেষভাবে সহায়তা করে। সাবমেরিনারদের পালিয়ে আসার খবর তখন সমগ্র ইউরােপে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক ইতিবাচক সাড়া জাগায়। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইং গঠনের ক্ষেত্রে আমিন উল্লাহ শেখ ও ফ্রান্স থেকে পালিয়ে আসা অন্য সাবমেরিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় নৌ-কমান্ডােদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
অক্টোবর মাসে আমিন উল্লাহ শেখের নেতৃত্বে একটি নৌকমান্ডাে দল গঠিত হয়। এ দল চাঁদপুর এলাকায় অনেক অপারেশন পরিচালনা করে। ২৬শে অক্টোবর হাইমচরে। পাকবাহিনীর ২টি খাদ্যবাহী জাহাজ দখল, ২৯শে অক্টোবর বার্মা ইস্টার্নের তেলের ডিপাে ধ্বংস, ৩০শে অক্টোবর চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের লন্ডন ঘাটে মার্কিন জাহাজ এম ভি লােরেন ধ্বংস, চাদপুর-লাকসাম রেলপথে রেলের ইঞ্জিন ও কালভার্ট ধ্বংস, ২রা নভেম্বর মেঘনা নদীতে তেলবাহী বার্জ দখল, ৪ঠা নভেম্বর আমিরাবাদে এম ভি স্বামী ও ৫ই নভেম্বর মেঘনা নদীতে চিনা পতাকাবাহী জাহাজ ডুবানাে, ১৩ই নভেম্বর হাইমচরে পাকবাহিনীর জাহাজ ডুবানাে ইত্যাদি-সহ আরাে অনেক অপারেশনে আমিন উল্লাহ শেখ বিশেষ দক্ষতা ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার আমিন উল্লাহ শেখকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ২০২, খেতাবের সনদ নম্বর ১২৭)।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমিন উল্লাহ শেখ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যােগ দেন। ১৯৭৪-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট হিসেবে নৌবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার পদে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে যােগ দেন। তিনি ‘বাংলার আশা’, ‘বাংলার আলাে’, ‘বাংলার সৌরভ’, ‘বাংলার গৌরব’ ইত্যাদি জাহাজে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি শিপিং কর্পোরেশন থেকে অবসর নেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ১ কন্যা ও ৬ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আয়েশা বেগম। ১৯৯৯ সালের ১৫ই জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড