আমিন বাজার যুদ্ধ
আমিন বাজার যুদ্ধ (বেগমগঞ্জ, নােয়াখালী) সংঘটিত হয় ২৬শে আগস্ট। এতে ৬ জন রাজাকার নিহত হয় এবং তাদের ২১টি রাইফেল মুক্তিযােদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে ১২ কিমি পশ্চিমে বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়কের পাশে আমিন বাজারের অবস্থান। আমিন বাজারের উত্তর দিকে আমিশাপাড়ায় সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষিত বাহিনী অবস্থান করছে এমন তথ্য হানাদার বাহিনীর জানা ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের দমন করার জন্য পাকবাহিনী ঐ এলাকায় কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তদুপরি চারদিকে মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খেয়ে তারা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীসহ তারা আমিন বাজার দিয়ে আমিশাপাড়ার দিকে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানি সেনারা নিজেরা পশ্চাতে থাকে।
সুবেদার লুৎফর রহমান দুদিন ধরে মুক্তিবাহিনীর ইউনিটগুলাে পরিদর্শন করেন। একদিন মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণের বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা দিয়ে তিনি কেবলমাত্র খেতে বসেছেন। এমন সময় খবর আসে হানাদারদের এক বিরাট বাহিনী আমিন বাজার হয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি পােড়াতে-পােড়াতে আমিশাপাড়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। খাওয়া রেখে সঙ্গে-সঙ্গে তিনি সহযােদ্ধাদের পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। এরপর সুবেদার ওয়ালী উল্লাহকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। নিজে এক প্লাটুন মুক্তিযােদ্ধা নিয়ে শত্রুবাহিনীকে পশ্চাৎ দিক থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। আদেশমতাে সকলে নিজ-নিজ অবস্থানে গিয়ে আক্রমণের জন্য তৈরি হন। শত্রুরা তখন আমিন বাজারের নিকট এসে উপস্থিত হয়। বিদ্যুৎ গতিতে মুক্তিযােদ্ধারা তিন দিক থেকে শত্রুর ওপর আক্রমণে ঝাপিয়ে পড়েন। এতে হানাদার বাহিনী হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। উপায়ন্তর না দেখে তারা তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার বাহিনীর পেছনে-পেছনে দৌড়াতে থাকে। তখনই তারা সুবেদার লুত্বর রহমানের প্লাটুনের মুখে গিয়ে পড়ে। চারদিক থেকে আক্রমণে হানাদার বাহিনী আর যায় কোথায়। এদিকে হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ চতুর্দিকে দৌড়াদৌড়ি করায় সুবেদার লুৎফর রহমানের কৌশলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। শত্রুরা হাতের অস্ত্র ফেলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ফায়ার করতে গেলে সাধারণ মানুষও মারা যায়। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের কোনােরূপ ক্ষতি সাধন না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে তাঁরা অপারেশন চালান। এতে ৬ জন রাজাকার নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। নিহতদের লাশ ফেলে অন্যরা ধানক্ষেতের পানির মধ্য দিয়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। রাজাকার মাওলানা মিজানুর রহমান অস্ত্রসহ সুবেদার লুৎফর রহমানের হাতে ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে পাকবাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবহিত হওয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধারা ২১টি চীনা রাইফেল উদ্ধার করতে সক্ষম হন। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কোনাে সদস্য হতাহত হননি। [মাে. ফখরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড