বীর বিক্রম আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল
আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল, বীর বিক্রম (১৯৫২১৯৭১) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যােগদানকারী, ক্র্যাক প্লাটুন এর সদস্য ও শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলাধীন দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে ১৯৫২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী এবং মাতার নাম ফিরােজা বেগম। আব্দুল হালিম চৌধুরী ১৯৭১ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। মে মাসের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আব্দুল হালিম চৌধুরী ত্রিপুরার মেলাঘরে যান। সেখানে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে অপারেশনের জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হলে সেখানে গেরিলা অপারেশন শুরু করে প্রত্যেকটিতে তিনি সাফল্য অর্জন করেন।
আগস্টের প্রথম দিকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় পাকবাহিনীর একটি চেকপােস্টে জুয়েল ও তার সহযােদ্ধারা একটি আক্রমণ পরিচালনা করেন। সেখানে সার্বক্ষণিক প্রহরায় ছিল ৪ জন মিলিটারি পুলিশ ও ৬ জন রাজাকার- জুয়েলসহ ক্র্যাক প্লাটুনের পাঁচজন সাহসী যােদ্ধা রাত ৮টার দিকে নিউ ইস্কাটনের গােপন আস্তানা থেকে একটি গাড়িতে করে সেখানে যান। গাড়িটি একটি গলিতে রেখে চারজন স্টেনগান ও একজন এসএমজি নিয়ে দ্রুত চেকপােস্টে গিয়ে আকস্মিকভাবে একযােগে আক্রমণ করেন। তাঁদের পাঁচটি হাতিয়ার একসঙ্গে গর্জে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে ধরাশায়ী হয় শত্রুদের সকলে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপারেশন শেষ করে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা নিজেদের গাড়িতে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে সক্ষম হন।
ফার্মগেট ছাড়াও এলিফ্যান্ট রােডের পাওয়ার স্টেশন, যাত্রাবাড়ি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গেরিলা অপারেশনে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দেন আব্দুল হালিম চৌধুরী। ১৯শে আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গেরিলা অপারেশনের জন্য রেকি করার সময় পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে তিনি আহত হন। এ কারণে ঢাকার বড় মগবাজার এলাকায় একটি বাড়িতে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পাকসেনারা তাদের দালালদের মাধ্যমে এ সংবাদ জেনে ২৯শে আগস্ট ঐ বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। হানাদার বাহিনী তাদের ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং পরদিন ৩০শে আগস্ট আবদুল হালিম চৌধুরীকে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা ও জীবন উৎসর্গের জন্য শহীদ আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েলকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড