বীর উত্তম আব্দুল লতিফ মণ্ডল
আব্দুল লতিফ মণ্ডল, বীর উত্তম (১৯৪০-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালের ১লা জানুয়ারি গাইবান্ধা জেলার পলাশপুর উপজেলার পবনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তােরাব আলী মণ্ডল এবং মাতার নাম কলি বেগম। পবনাপুর এস এম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনি পােস্টিং পান ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈয়দপুর সেনানিবাসে। পরবর্তীতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য মনােনীত হয়ে তিনি এবােটাবাদ এ এম সি সেন্টারে প্রশিক্ষণ শেষে পুনরায় সৈয়দপুরে তার নিজ রেজিমেন্টে যােগদান করেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আব্দুল লতিফ সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রবল রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় তিনি তাঁর রেজিমেন্টের সঙ্গে শীতকালীন মহড়ায় ব্যস্ত ছিলেন। পাঞ্জাবি-বিহারি অধ্যুষিত এলাকা হবার কারণে সৈয়দপুরে মার্চ মাসের শুরু থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাশাসক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তার প্রভাব সৈয়দপুরেও এসে পড়ে। ২৮শে মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত ৩য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে সুযােগ বুঝে আব্দুল লতিফ অস্ত্রসহ সেনানিবাস থেকে বের হয়ে এসে গাইবান্ধা-চিলমারী অঞ্চলে অবস্থান নেন এবং বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধাঞ্চল গঠিত হলে তাঁর রেজিমেন্ট ৬ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গাইবান্ধা এলাকায় যুদ্ধ করে। পরবর্তীতে ব্রিগেড আকারে নিয়মিত বাহিনী গঠন করা হলে তিনি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে ‘জেড’ ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে জাফলং, তামাবিল, লাঠিটিলা, গােয়াইনঘাটসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আব্দুল লতিফ যে-সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তার মধ্যে সিলেটের গােয়াইনঘাট যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সহযােদ্ধাদের নিয়ে তিনি গােয়াইনঘাটে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাক্যাম্প আক্রমণ করেন। শত্রুসেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে তুমুল যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পলায়নরত শত্রুসেনাদের গুলিতে আব্দুল লতিফ শহীদ হন। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৭-৮ জন সৈন্য নিহত এবং বহু আহত হয়। তাঁর সহযােদ্ধারা গােয়াইনঘাটে তাকে সমাহিত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ ল্যান্স নায়েক আব্দুল লতিফ মণ্ডলকে বীর উত্তম (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৫, খেতাবের সনদ নং ৩৮)। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড