বীর উত্তম আব্দুল মান্নান খন্দকার
আব্দুল মান্নান খন্দকার, বীর উত্তম (১৯৪০-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালের ১লা জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পশ্চিম ডেকড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল জব্বার খন্দকার এবং মাতার নাম আছিয়া খাতুন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে আব্দুল মান্নান খন্দকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল জয়দেবপুর সেনানিবাস। ২৫শে মার্চ রাত থেকে পাকিস্তান বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন স্থানে ব্যাপক হত্যা-নির্যাতন শুরু করলে তিনি ২৭শে মার্চ তার ইউনিটের সঙ্গে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরােধ যুদ্ধ শেষে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ী/বাঘাইবাড়ী সাব-সেক্টর অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে নিয়মিত বাহিনী নিয়ে ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ‘এস’ ফোর্সের অধীনে চলে আসে। আব্দুল মান্নান এ ফোর্সের ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। তিনি তাঁর সহযােদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যে-সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হবিগঞ্জ জেলার কালেঙ্গার সিন্দুরখান যুদ্ধ মুক্তিযােদ্ধারা গােয়েন্দা সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল কালেঙ্গায় ঘাঁটি স্থাপনের জন্য আসবে। ২৪শে সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কালেঙ্গা সিন্দুরখান রাস্তার পাশে ছােট-ছােট টিলার ওপর অবস্থান নিয়ে এম্বুশ করেন। শত্রুসেনারা এম্বুশের মধ্যে আসামাত্র তাদের ওপর একযােগে গুলি শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পূর্বেই তাদের একজন অফিসারসহ বহু সৈন্য নিহত এবং অনেকেই আহত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে পলায়নরত শত্রুসেনাদের জীবিত গ্রেফতার করার জন্য বাংকার ছেড়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা তাদের ধাওয়া করেন। এ-সময় শত্রুসৈন্যদের ছােড়া মেশিনগানের গুলিতে আব্দুল মান্নান শহীদ হন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ নায়েক আব্দুল মান্নান খন্দকারকে ‘বীর উত্তম’ (মরণােত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৪, খেতাবের সনদ নং ৩৭)। [সাজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড