You dont have javascript enabled! Please enable it! হাবিলদার মেজর বীর প্রতীক আব্দুল মালেক - সংগ্রামের নোটবুক

হাবিলদার মেজর বীর প্রতীক আব্দুল মালেক

আব্দুল মালেক, বীর প্রতীক (১৯৪১-২০১১) হাবিলদার মেজর এবং ২নং সেক্টরের অধীন পঞ্চবটী সাব-সেক্টরের বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪১ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. আবেদ আলী এবং মাতার নাম ফেলিমন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। এরপর চট্টগ্রামের ইবিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারতপাকিস্তান যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। ৭১-এর মার্চে জয়দেবপুর সেনানিবাসে ২য় বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার মেজর পদে তিনি কর্মরত ছিলেন। একজন নিম্নপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বাঙালি সেনাদের প্রতি পাকিস্তানি সেনাদের বিমাতাসুলভ আচরণ, বৈষম্য ও অবিচার লক্ষ করেন। ৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল বাঞ্চালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, অসহযােগ আন্দোলনসহ মার্চের রাজনৈতিক ঘটনাবলি, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য, পাকসেনাদের বিরুদ্ধে ১৯শে মার্চ জয়দেবপুরে গণপ্রতিরােধ ইত্যাদি ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে। ২৫শে মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বাঙালিদের ওপর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরুর পরপর মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে তিনি অন্যান্য বাঙালি সেনাদের সঙ্গে ময়মনসিংহে অবস্থান নেন। তিনি ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মােহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে আশুগঞ্জে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ২নং সেক্টরের পঞ্চবটী সাব-সেক্টরে বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ২য় ও ১১শ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমন্বয়ে ‘এস’ ফোর্স গঠনকালে তিনি ১১শ ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হন। ৬ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর নামক স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযােদ্ধাদের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের এ, সি, ও ডি ৩টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। হাবিলদার মেজর আব্দুল মালেক ‘ডি’ কোম্পানিতে ছিলেন। এ কোম্পানির ওপর দায়িত্ব ছিল শাহবাজপুর সেতুটি দখলে নেয়া। ডি কোম্পানির অগ্রভাগে ছিলেন ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে এম সফিউল্লাহ। তাদের লক্ষ্য ছিল চান্দুরা অভিমুখে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু হঠাৎ তারা গাড়িভর্তি একদল পাকাসেনার সম্মুখীন হন। মেজর সফিউল্লাহ তাদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানান। পাকসেনারা তাঁর সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাঁদের দিকে গুলি ছােড়ে। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি যুদ্ধে রূপ নেয়। মেজর সফিউল্লাহসহ মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের আওতার মধ্যে পড়েন। পাকহানাদারদের ছােড়া গুলিতে ক্যাপ্টেন নাসিমসহ আরাে কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধা আহত হন। এমতাবস্থায় আব্দুল মালেক সামান্য বিচলিত না হয়ে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে শত্রুসেনাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। অন্যরাও তাঁকে অনুসরণ করেন। ১১ জন পাকসেনাকে তারা বন্দি করতে সক্ষম হন। বাকিরা পালিয়ে যায়। ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর সফিউল্লাহ এক মারাত্মক বিপদ থেকে রক্ষা পান। এখানকার যুদ্ধে আব্দুল মালেকের অত্যন্ত সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
তাঁর স্ত্রীর নাম আম্বিয়া বেগম। এ দম্পতি ৩ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। ২০১১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর মুক্তিযােদ্ধা আব্দুল মালেক মৃত্যুবরণ করেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড