You dont have javascript enabled! Please enable it! ৫ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযােদ্ধা বীর বিক্রম আব্দুর রউফ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম আব্দুর রউফ

আব্দুর রউফ, বীর বিক্রম সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ও ৫ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি নরসিংদী জেলার মনােহরদী উপজেলার কোচের চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল হেকিম ও মাতার নাম রওশন আরা বেগম। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনের রায় মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, অগ্নিঝড়া মার্চের অসহযােগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও আসন্ন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাঙালিদের উদ্দেশে সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান ইত্যাদি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যােগদানে উদ্বুদ্ধ করে। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি আর নিশ্ৰুপ থাকতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধে যােগদানের ব্যাপারে পরিবারের অনুমতি না পেয়ে তিনি একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে অবশেষে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একটি ক্যাম্পে গিয়ে উপস্থিত হন। তখন সামরিক প্রশিক্ষণ বলতে তার কিছুই ছিল না। নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশে জুন মাসে তাঁকে ভারতের মুক্তি সামরিক একাডেমিতে পাঠানাে হয়। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশনপ্রাপ্ত হন। এরপর তিনি মেজর মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন ৫ নম্বর সেক্টরে সুনামগঞ্জ সীমান্তবর্তী শেলা সাব-সেক্টরে যােগ দেন। ক্যাপ্টেন হেলাল ছিলেন এ সাব-সেক্টরের কমান্ডার তাকে একটি কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি যেসব বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তার মধ্যে ছাতক যুদ্ধ (১৩-১৭ই অক্টোবর), সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থিত ডাবর ফেরি ও জাউয়া সড়ক সেতু ধ্বংস (১২ই নভেম্বর), সিলেট-ছাতক সড়কে অবস্থিত রেল সেতু ধ্বংস (২৯শে নভেম্বর), টেংরাটিলার যুদ্ধ (৩০শে নভেম্বর) উল্লেখযােগ্য। টেংরাটিলা ছিল পাকহানাদার বাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাটি। ৫ দিন যুদ্ধের পর টেংরাটিলা মুক্তিযােদ্ধাদের দখলে আসে। পাকহানাদাররা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। টেংরাটিলার যুদ্ধে আব্দুর রউফ অপরিসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। সিলেট অঞ্চলে পাকহানাদার বাহিনীর ১৭ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত আব্দুর রউফ ছাতক, গােবিন্দগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার অন্যান্য যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আব্দুর রউফকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম শামীম আরা রউফ। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড