বীর প্রতীক আব্দুর রহমান
আব্দুর রহমান, বীর প্রতীক (১৯৪০-১৯৭১) ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌরসভার টানপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাে. মােস্তফা মিয়া ওরফে কফিল উদ্দিন এবং মাতার নাম গুলবারে নেছা।
আব্দুর রহমান ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি জয়দেবপুর সেনানিবাসে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। ৭ ও ৮ই এপ্রিল ক্যাপ্টেন আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্, পুলিশ, আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সমন্বয়ে মুক্তিযােদ্ধারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সিলেট শহর, খাদিমনগর, আম্বরখানা, ওয়ারলেস স্টেশন ও সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থান নেন। এলএমজি চালক ল্যান্স নায়েক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সুরমা নদীর কিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান নেয়। তার গ্রুপের ২০-২৫ জনের সবাই ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য। ৮ই এপ্রিল রাতে মুক্তিযােদ্ধারা পাকবাহিনীর মুখােমুখি হন। কিন্তু পাকবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে বেশির ভাগ অবস্থান থেকে মুক্তিযােদ্ধারা পিছু হটেন। ৯ই এপ্রিল সকাল পর্যন্ত অসীম সাহসের সঙ্গে কিন ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এলএমজি চালক ল্যান্স নায়েক আব্দুর রহমান ও তাঁর সহযােদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যান। হঠাৎ পাকবাহিনীর ছােড়া একটি শেল এলএমজি পােস্ট-এ এসে বাস্ট হয় এবং প্রিন্টারের আঘাতে যুদ্ধরত অবস্থায় আব্দুর রহমান শহীদ হন।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শহীদ ল্যান্স নায়েক আব্দুর রহমানকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। তাঁর স্ত্রীর নাম মােসা. আয়েশা বেগম। আব্দুর রহমান ১ পুত্র সন্তানের জনক। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড