বীর প্রতীক আবুল হাসেম
আবুল হাসেম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৯) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সুরুজ মিয়া ও মাতার নাম রূপভাননেছা। তার স্ত্রীর নাম লাইলি বেগম।
১৯৭১ সালে আবুল হাসেম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে চাকরিরত ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোট। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে শাহবাজপুরে নিজ বাড়িতে আসার পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চাকরিতে ফিরে না গিয়ে প্রতিরােধযুদ্ধে যােগ দেন। এসময় তিনি কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় অপারেশনে অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংসের সফল অপারেশন। পরবর্তীতে তিনি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে যুদ্ধ করেন।
অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও পার্শ্ববর্তী আজমপুরে মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের চার্লি কোম্পানি বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে। এসব অপারেশনের একটি ছিল ৩০শে নভেম্বর মধ্যরাতে আজমপুর রেলস্টেশনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ ও বীরত্বের সঙ্গে শত্রুদের পাল্টা আক্রমণ মােকাবিলা করে ভােররাতের আগেই আজমপুর রেলস্টেশন ও আশেপাশের এলাকা দখলে নেয়া। এরপর পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে এ এলাকায় পুনরায় আক্রমণ চালায়, কিন্তু মুক্তিবাহিনীও তাদের প্রতিরােধ করতে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি আক্রমণ শেষে এক পর্যায়ে মুক্তিযােদ্ধারা চূড়ান্তভাবে আজমপুরে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এসব যুদ্ধে আবুল হাসেম অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযােদ্ধা আবুল হাসেম-কে ‘বীর প্রতীক’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সফল সমাপ্তির পর আবুল হাশেম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি নায়েক সুবেদার পদে উন্নীত হন। [এস এম মাহফুজুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড