বীর প্রতীক আবু তাহের
আবু তাহের, বীর প্রতীক (১৯১৯-১৯৭৯) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯১৯ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পীর কাশিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আশরাফ আলী ভূঁইয়া এবং মাতার নাম জোবেদা খাতুন। তিনি আন্দিকুট হাইস্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
আবু তাহের ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান পুলিশে যােগদান করেন। ১৯৫৯ সালে ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) পুনর্গঠিত হলে তাঁকে সেখানে আত্তীকরণ করা হয়। ইপিআর-এ দীর্ঘদিন চাকরি করে তিনি হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বপর্যন্ত তিনি দিনাজপুর উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। ২৬শে মার্চ রাতে এ উইং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তাদের কয়েকজনকে হত্যা করে কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরােধ যুদ্ধ শুরু করে। আবু তাহের এসব প্রতিরােধ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ২০-২৫ দিন পর পাকবাহিনীর বিমান ও আর্টিলারি আক্রমণের মুখে তাঁদের প্রতিরােধ ভেঙ্গে যায়। তারা ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরে চলে যান। সেখান থেকে পাকবাহিনীর ওপর গেরিলা হামলা পরিচালনা করেন। এসব হামলায় অনেক পাকসেনা ও রাজাকারের প্রাণহানি ঘটে।
সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে আবু তাহের ‘জেড’ ফোর্সে যােগ দেন এবং বকশিগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, হালুয়াঘাট, ছাতক, দোয়ারাবাজার প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেন। তাঁরা টেংরাটিলা দখল করে ছাতকের দিকে অগ্রসর হন এবং এক পর্যায়ে পাকবাহিনীকে ধাওয়া করে গােবিন্দগঞ্জ বাজারে নিয়ে যান। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটে সিলেটে যেতে বাধ্য হয়। এসব স্থানে আবু তাহের অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আবু তাহেরকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৪২, খেতাবের সনদ নং ১৯২)। মুক্তিযুদ্ধের পর আবু তাহের বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)এ যােগদান করেন এবং ১৯৭৮ সালে অবসরে যান। ব্যক্তিজীবনে তিনি চার কন্যা ও তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মােসাম্মৎ সাফিয়া। বীর মুক্তিযােদ্ধা আবু তাহের ১৯৭৯ সালের ১৬ই মে মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড