You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আবদুল্লা আল মাহমুদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আবদুল্লা আল মাহমুদ

আবদুল্লা আল মাহমুদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যােগদানকারী বীর মুক্তিযােদ্ধা এবং স্বাধীনতাপরবর্তীকালে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ই জুলাই শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার কাকিলাকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মফিজল হক, মায়ের নাম রােকেয়া হক।
আবদুল্লা আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে প্রতিরােধ যুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শ্রীবর্দী উপজেলা দখল করলে তিনি সদলবলে ভারতের ঢালুতে আশ্রয় নেন। সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে তারা নিজেদের চেষ্টায় একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তােলেন। জুন মাসের পর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। আগস্ট মাসে তাঁকে ১১ নম্বর সেক্টরের ঢালু সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ সাব-সেক্টরের অপারেশনাল এলাকা ছিল হালুয়াঘাট, ঢালু ও ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত। আগস্ট মাস থেকে এসব এলাকার অনেকগুলাে অপারেশন এবং সম্মুখ যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
শেরপুর জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম তেলিখালীতে পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য একটি ঘাঁটি ছিল। এর প্রতিরক্ষায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১২৫ জন সৈন্য, রেঞ্জার্স ও রাজাকার মিলিয়ে মােট ২৩৭ জন। দূরে বাঘাইতলীতে ছিল তাদের গােলন্দাজ বাহিনীর একটি দল। ৩রা অক্টোবর মুক্তিযােদ্ধারা পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে ছিল মিত্রবাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্টের সৈনিকরাসহ সব মিলিয়ে ৮০০ জন। আবদুল্লা আল মাহমুদ ছিলেন একটি দলের নেতৃত্বে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। মুক্তিযােদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরােধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে এবং তাদের পালানাের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে একজন ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সবাই নিহত হয়। অপরদিকে ১৯ জন মুক্তিযােদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ৫৬ জন শহীদ হন। কাট অব পার্টির অধিনায়ক হিসেবে আবদুল্লা আল মাহমুদ এযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আবদুল্লা আল মাহমুদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নিজেকে চিকিৎসা পেশায় নিয়ােজিত করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ডা. কামরুন্নেসা। তাঁদের ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [রেহেনা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড