You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক আবদুল মান্নান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক আবদুল মান্নান

আবদুল মান্নান, বীর প্রতীক (১৯৪৭-২০০৮) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১২ই নভেম্বর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ঠাকুর মল্লিক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আমিনুদ্দিন ফরাজী ও মাতার নাম জামেলা খাতুন। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম।
আবদুল মান্নান ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দফাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। তবে ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে ছুটিতে এসে ছুটির শেষের দিকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তিনি ঢাকা সেনানিবাসের ট্রানজিট ক্যাম্পে যােগ দেন। তার পরপরই ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সুযােগ বুঝে আবদুল মান্নান ক্যাম্প ছেড়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে বরিশাল চলে যান এবং প্রতিরােধযােদ্ধাদের সঙ্গে সামিল হন। পরে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আবদুল মান্নান বাবুগঞ্জের ঝুনাহার এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আবদুল মান্নান ও তার সহযােগীরা এলাকায় রাজাকার এবং টহলরত অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত ও ঝটিকা অপারেশনে আসা পাকিস্তানি সেনা সদস্যের দল এবং রাজাকারদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাতেন। হানাদার ও তাদের দোসরদের অনেকেই আবদুল মান্নানের গুলিতে নিহত হয়েছে, অনেকে তাঁর ও তাঁর দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এছাড়া আবদুল মান্নান শত্রুশিবিরের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রায়ই গুপ্তচর হিসেবে অভিনব ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য তিনি কখনাে চিংড়ি বিক্রেতা, কখনাে ক্ষুধার্ত ও দীনহীন ভিখারি সেজে পাকিস্তানি ক্যাম্পে ঢুকেছেন। তাদের ক্যাম্প ও কর্মপরিচালনা সম্বন্ধে যেটুকু জানতে পেরেছেন, তা সংগ্রহ করে এনেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযােদ্ধা আবদুল মান্নানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আবদুল মান্নান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যােগ দেন এবং ১৯৮৫ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেন। তিনি ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ৪ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [এস এম মাহফুজুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড