বীর বিক্রম আবদুল হক
আবদুল হক, বীর বিক্রম (১৯৪৪-১৯৮৭) নায়েক সুবেদার ও বীর মুক্তিযােদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে। পিতা মােহাম্মদ সুকানী ও মাতা সােহরা খাতুন। তিনি সন্দ্বীপ বদরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যােগদান করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অস্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ প্রতিরােধযুদ্ধ শুরু হলে মেজর জিয়ার অধীনে তিনি অন্যান্য সৈনিকদের সঙ্গে কালুরঘাট দিয়ে বােয়ালখালীর কলরডেঙ্গায় পাহাড়ে অবস্থান নেন। ১১ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কালুরঘাট প্রতিরােধযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। কালুরঘাটের পতন হলে অন্যান্য সৈনিকদের সঙ্গে তিনি রামগড় সীমান্তের দিকে চলে যান। পথিমধ্যে ২১শে এপ্রিল বন্দুবভাঙ্গা ও ২৪শে এপ্রিল চেঙ্গী নদী এলাকায় মেজর মীর শওকত আলীর অধীন লে. মাহফুজের নেতৃত্বে মহালছড়িতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেন। এ- যুদ্ধে উভয় পক্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে তিনি ভারতে চলে যান। সেখান থেকে ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে দেশ শত্রুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি পুনরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে আবদুল হক ঢাকা সেনানিবাস ও রাজশাহী সেনানিবাসে কর্মরত থেকে ১৯৮৭ সালের শেষদিকে রাজশাহী সেনানিবাস থেকে নায়েক সুবেদার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অসবর গ্রহণের কিছু পর একই বছর ২১শে নভেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী খতিজা খাতুন এবং ৬ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তান রেখে যান। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড