আন্দুলিয়া গণহত্যা
আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় ২৫ ও ২৬শে সেপ্টেম্বর। ডুমুরিয়া সদর থেকে সড়ক পথে ১০ কিলােমিটার উত্তরদিকে রঘুনাথপুর ইউনিয়নে আন্দুলিয়া গ্রামের অবস্থান। ডুমুরিয়ার মজিদ বাহিনীর সঙ্গে রুদাঘরার রাজাকারদের একাধিক যুদ্ধের পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা আন্দুলিয়া গ্রামে ঢুকে গণহত্যা চালায়। এতে ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়। গণহত্যার পাশাপাশি হানাদাররা লুটপাট ও অগ্নিসংযােগ করে।
সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রুদাঘরার একটি রাজাকার দল বরুণা গ্রামে লুটপাট চালায়। লুটের মালামাল একটি ট্রাকে তুলে তারা আন্দুলিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে যখন যাচ্ছিল, তখন মজিদ বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল তাদের প্রতিরােধ করে। মজিদ বাহিনীর মুক্তিযােদ্ধারা আন্দুলিয়ার ডা. দুলাল চন্দ্রের বাড়ির ছাদের ওপর থেকে রাজাকারদের ট্রাকে বােমা নিক্ষেপ করেন। এতে ৩ জন রাজাকার মারা যায়। এ ঘটনার প্রতিশােধ নিতে ২৫শে সেপ্টেম্বর হানাদার পাকসেনারা আন্দুলিয়ায় আক্রমণ করে। দৌলতপুর থেকে শাহপুর বাজার হয়ে গাড়িতে তারা আন্দুলিয়ায় আসে। বৃষ্টির কারণে আন্দুলিয়া গ্রামের কাঁচা ও কর্দমাক্ত রাস্তায় তাদের গাড়ি সেখানকার গাজী বাড়ির কাছে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে আটকে যায়। এ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে তারা এলােপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। ভীত-সন্ত্রস্থ গ্রামবাসীরা দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বিলে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি সেনারা এদিন অমূল্য ও বিহারীলালকে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনা ও স্থানীয় রাজাকাররা এরপর বিভিন্ন বাড়ি থেকে লােকজনকে ডেকে এনে কাদা থেকে গাড়ি তােলার ব্যবস্থা করে। ২৬শে সেপ্টেম্বর জামিরা রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকারদের একটি বিরাট দল অতর্কিতে আন্দুলিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। এদিন তারা বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযােগ করে। সমস্ত গ্রাম তারা তছনছ করে। এদিন রাজাকাদের গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন।
আন্দুলিয়া গণহত্যায় নিহত ১৭ জনের নাম জানা গেছে। তারা সবাই ছিলেন আন্দুলিয়া গ্রামের অধিবাসী। নিহতরা হলেনঅমূল্য চৌকিদার, বিহারীলাল মণ্ডল, ইসহাক আকুঞ্জি (পিতা রহিম বখশ আকুঞ্জি), সদুলাহ আকুঞ্জি, আজিজ আকুঞ্জি, সলেমান আকুঞ্জি, আসেফ আলী আকুঞ্জি, মকছেদ আলী আকুঞ্জি, রাহেন আকুঞ্জি, আনছার আকুঞ্জি, রহিম বখশ আকুঞ্জি, ঘণ্টা মণ্ডল, জ্ঞান মণ্ডল, রওশন মােড়ল, মালেক গাজী, সুরেন্দ্রনাথ কুণ্ডু ও আবদুস সবুর বিশ্বাস। [দিব্যদ্যুতি সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড