আন্ধারীঝাড় যুদ্ধ (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার আন্ধারীরঝড়ে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর একাধিক যুদ্ধ হয়। ২৪শে জুলাই এখানে মুক্তিযােদ্ধাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৭ই নভেম্বর দুপক্ষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত এবং আন্ধারীরঝড় হানাদারমুক্ত হয়।
ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী থানার মধ্যবর্তী এলাকা আন্ধারীরঝাড়। ভুরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী সড়ক পথে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের রসদ আনা-নেয়া করত। জুলাই মাসে মুক্তিযােদ্ধারা সংবাদ পান যে, রাতে পাকবাহিনীর কিছু অফিসার নাগেশ্বরী থেকে ভুরুঙ্গমারীতে যাবে। এ খবর পাওয়ার পর মুক্তিযােদ্ধারা পাকসেনাদের বহনকারী গাড়ি উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা পাকসেনাদের যাতায়াত পথে আন্ধারীরঝড়ে রাস্তার উত্তর দিকে বাঁশঝাড়ের কাছে মাইন স্থাপন করেন। মুক্তিযােদ্ধাদের ৪টি দল গঠিত হয়। ২০ জন করে ৩ দলে এবং শেষ দলে ১০ জন সর্বমােট ৭০ জন এ অভিযানে অংশ নেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দল স্থাপিত মাইন থেকে ৫০০ গজ দূরে, তৃতীয় দল রাস্তায় মাইন বসানাের কাজে এবং চতুর্থ দল তৃতীয় দল থেকে সােজা ফুলকুমার নদীর পাড়ে সার্পোট হিসেবে অবস্থান নেয়। সকল দলে ১টি করে ওয়ারলেস সেট, প্রথম ও দ্বিতীয় দলে ৪টি এলএমজি বাকি সব দলে এসএলআর ও অন্যান্য অস্ত্র ছিল।
২৩শে জুলাই রাত ১২টার মধ্যে মুক্তিযােরা রাস্তা কেটে ৬টি মাইন বসাতে সক্ষম হন। ২৪শে জুলাই ভাের ৪টার পরে পাকসেনাদের বহনকারী গাড়ি রায়গঞ্জ থেকে ভুরুঙ্গামারীর পথে আন্ধারীরঝাড়ের নির্ধারিত স্থানে আসামাত্র বিকট আওয়াজে মাইনগুলাে বিস্ফোরিত হয়। ফলে রাস্তায় বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে হানাদারদের গাড়ি বিধস্ত হয়ে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়। সফল অপারেশনের পর মুক্তিযােদ্ধারা নিরাপদে নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যান।
১৪ই নভেম্বর ভুরুঙ্গামারী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকবাহিনী রায়গঞ্জে অবস্থান নেয়। মুক্তিযােদ্ধারা আন্ধারীরঝাড়ে আক্রমণ শুরু করলে পাকবাহিনী ১৫ থেকে ১৭ই নভেম্বর পর্যন্ত আর্টিলারি দ্বারা পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে মুক্তিযােদ্ধারা জয়মনিরহাট ও আন্ধারীরঝড়ের মূল পাকা সড়কের দুদিকে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। এ সড়কে পূর্ব থেকে মিত্রবাহিনীর অবস্থান ছিল। তাঁরাও পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধারা খাল-বিল থেকে পানি সংগ্রহ এবং ক্ষেতের কাঁচা সবজি খেয়ে যুদ্ধ করেন। ১৭ই নভেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযােদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকসেনারা আন্ধারীরঝাড় থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ১৭ই নভেম্বর বিকেলে আন্ধারীরঝাড় মুক্ত হয়। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর একটি বড় কনভয় জয়মনিরহাট থেকে এগিয়ে সন্ধ্যার পর আন্ধারীরঝড়ে শক্ত অবস্থান নেয়। [এস এম হারুন অর রশীদ লাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড