আনসু প্রসাদ মহাবীর চক্র
আনসু প্রসাদ মহাবীর চক্র (১৯৫৩-১৯৭১) ১০ মাহার রেজিমেন্ট, ভারতীয় সেনাবাহিনী, ১৯৫৩ সালের ১৯শে মে ভারতের উত্তরাখণ্ডের চামেলী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২০শে নভেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে যােগদান করেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১০ মাহার রেজিমেন্টের সৈনিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি মিত্রবাহিনীর সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৩০শে নভেম্বর সিলেটের শমসেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় যুদ্ধে শত্রুর একটি অবস্থান থেকে মেশিনগানের আক্রমণে চারদিক বিধ্বস্ত হচ্ছিল। সিপাহি আনসু প্রসাদের ব্যাটালিয়নকে শত্রুর অবস্থান ধ্বংস করার দায়িত্ব প্রদান করা হলে অকুতােভয় তরুণ সৈনিক আনসু প্রসাদ নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে স্বেচ্ছায় শত্রুর অবস্থান ধ্বংস করার জন্য কিছু গ্রেনেড হাতে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শত্রুর দুর্ভেদ্য বাংকার সফলভাবে ধ্বংস করার এক পর্যায়ে শত্রুর আক্রমণে তিনি দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ হন, কিন্তু আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। হঠাৎ শত্রুর মেশিনগানের গুলি তার কাঁধে এসে লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তা সত্ত্বেও তিনি এগিয়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপের কারণে ১০ মাহার রেজিমেন্টের আক্রমণের গতি ত্বরান্বিত হয় এবং যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়। দেশ সেবায় অবদান ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক শহীদ সিপাহি আনসু প্রসাদ-কে মহাবীর চক্র সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ মহাবীর চক্র প্রাপক এবং তাঁর চাকরি হয়েছিল মাত্র ১১ দিন। এই রেজিমেন্টে তাঁর নামে একটি প্যারেড গ্রাউন্ড রয়েছে, যার নাম আনসু প্রসাদ প্যারেড গ্রাউন্ড এবং ইউনিটের সামনে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ শহীদ সিপাহি আনসু প্রসাদ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণােত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড