বীর বিক্রম আতাহার আলী মল্লিক
আতাহার আলী মল্লিক, বীর বিক্রম (১৯৩৯-১৯৭১) বীর মুক্তিযােদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার গােপালপুরে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাঞ্চন আলী মল্লিক এবং মাতার নাম আমিনা খাতুন। আতাহার আলী মল্লিক হলতাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং বাদলপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে চাকরির মধ্য দিয়ে। ১৯৪৯ সালে তিনি পুলিশে এবং ১৯৫৪ সালে ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ যােগদান করেন। রাজশাহীর সারদা থেকে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে আতাহার আলী মল্লিক রংপুর জেলার চিলমারী বিওপি-তে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সঙ্গে দেখা করেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যার খবর রংপুরে ছড়িয়ে পড়লে তিনি অন্য ইপিআর সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৯শে মার্চ তাঁর নেতৃত্বাধীন ইপিআর দল তিস্তা ব্রিজের ওপর বেরিকেড দিয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে। তাদের লক্ষ্য ছিল রংপুর থেকে অগ্রসরমাণ পাকবাহিনীকে প্রতিহত করা। পাকবাহিনী ব্রিজ অতিক্রম করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। এখানে এক নাগাড়ে ৫ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। পাকবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে মুক্তিযােদ্ধারা পিছু না হটে বীরদর্পে যুদ্ধ করেন। এক পর্যায়ে একজন ছাড়া সকল প্রতিরােধযােদ্ধা শহীদ হন। আতাহার আলী মল্লিকও এখানে ২রা এপ্রিল শহীদ হন। মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতিরােধ থেমে গেলে পাকবাহিনী তিস্তা ব্রিজ দিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে অনুপ্রবেশ করে। শহীদ মুক্তিযােদ্ধাদের লাশ পাকসেনারা নিয়ে যায়। এভাবে আতাহার আলী মল্লিক ও অন্যরা দেশমাতৃকাকে হানাদারদের কবলমুক্ত রাখার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন এবং জীবনদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আতাহার আলী মল্লিককে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ১৯৭, খেতাবের সনদ নম্বর ১২২)। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মােসা. ফাতেমা বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড