আগ্রাবাদ ঢেবা ওয়াটার পাম্প অপারেশন (চট্টগ্রাম মহানগর)
পরিচালিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে। ওয়াটার পাম্পটি চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার খুব কাছে অবস্থিত। ছিল। সমগ্র বন্দর এলাকায় পাকাবাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল। ঢেবা ওয়াটার পাম্প থেকে পাকবাহিনী তখন কেবল তাদের সুবিধামতাে পানি সরবরাহ করত। এজন্য এলাকার সাধারণ মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিল। পাম্পের পাহারায় নিযুক্ত পাকসেনারা এখানে প্রায়ই মদের আসর বসাত বলে এ নিয়েও স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ছিল। তাই মুক্তিযােদ্ধারা তিনটি কারণে এ পাম্প আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন- বন্দর এলাকায় পাকবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা, পানি সরবরাহ না করে পাকবাহিনী সাধারণ মানুষকে যে কষ্ট দিচ্ছে তার প্রতিশােধ নেয়া এবং মদের আসর বসিয়ে এলাকার পবিত্রতা বিনষ্ট করার সমুচিত জবাব দেয়া।
তিনজন মুক্তিযােদ্ধা এ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা হলেন- মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, তােফাজ্জল হােসেন এবং আবদুর রহমান (তিনি ছিলেন সহযােগী)। অপারেশনের দিন রাত তিনটার সময় মুক্তিযােদ্ধারা আধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে পাম্পে প্রবেশ করেন। এর পূর্বে অপারেশন স্থল তাঁরা রেকি করেন। নেশাগ্রস্ত পাকসেনারা তখন পাম্পের নিকটবর্তী রেল লাইনের ওপর বসা ছিল। পাহারারত একজন রাজাকারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুক্তিযােদ্ধারা পাম্পে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক স্থাপন করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিস্ফোরণ ঘটে এবং অপারেশন পুরােপুরি সফল হয়। বন্দর এলাকা, বিশেষকরে এক নম্বর জেটি ওয়াটার পাম্পের অনেক কাছে ছিল বলে এ অপারেশনের সফলতা পাকিস্তান বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর ফলে প্রমাণিত হয় যে, পাকবাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে সফল অপারেশন পরিচালনা করার কৌশল, সাহস ও দক্ষতা মুক্তিবাহিনীর রয়েছে। এ অপারেশনের ফলে মুক্তিবাহিনীর সাহস এবং আত্মবিশ্বাস আরাে বেড়ে যায়। [সাখাওয়াত হােসেন মজনু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড