You dont have javascript enabled! Please enable it! 'চার খলিফা' খ্যাত ছাত্রনেতাদের অন্যতম আ স ম আবদুর রব - সংগ্রামের নোটবুক

আ স ম আবদুর রব

আ স ম আবদুর রব (জন্ম ১৯৪৫) চার খলিফা’ খ্যাত ছাত্রনেতাদের অন্যতম, ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক, ডাকসুর ভিপি, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদএর নেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীনতাউত্তর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৫ সালের ২রা জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরবেদমা পতাকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী আজ্জম, মাতার নাম মাজেদা খাতুন। চরপােড়াগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আ স ম আবদুর রবের শিক্ষাজীবন শুরু। তিনি ১৯৬১ সালে মাইজদী পৌরকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে চৌমুহনী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট এবং পরে একই কলেজ থেকে বি কম পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে মাইজদী পৌরকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় আ স ম আবদুর রব ছাত্র আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তখন থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। তিনি ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর ১৯৬২ সালের শরীফ শিক্ষা কমিশন’ ও ১৯৬৪-র ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপাের্টবিরােধী আন্দোলন, ৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষিত ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলন ও আইয়ুববিরােধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯-৭০ সময়ে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭০ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র ভিপি ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২রা মার্চ বিকেলে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর তিনি অন্যতম নেতা ছিলেন। একইদিন সকাল ১১টায় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও ডাকসু-র যৌথ আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় আয়ােজিত ছাত্র-জনতার সমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা তিনি-সহ নেতৃবৃন্দ উর্ধ্বে তুলে ধরেন। ৩রা মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে পল্টন ময়দানে ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ঐ অনুষ্ঠানে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করা হয়।
২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ সারাদেশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেন। একই দিন আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ-এর নেতৃত্বে পল্টনে এক ছাত্র-জনতার সমাবেশের আয়ােজন করা হয়। ঐ সমাবেশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও জয়বাংলা বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করা হয়। এরপর তাঁরা মিছিল সহকারে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার পরপর শুরু হয়। বাঙালির প্রতিরােধ সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধকালে আ স ম আবদুর রব মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ভারতের দেরাদুন থেকে ১ মাসের সিনিয়র লিডারশিপ প্রশিক্ষণ নেন এবং মুক্তিযােদ্ধাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষক নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সময়ে মুজিব বাহিনী (বিএলএফ)-এর ৪টি সেক্টরের মধ্যে আ স ম আবদুর রব ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টর বা জোনের উপ-অধিনায়ক। তাঁর অধিনায়ক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি।
আ স ম আব্দুর রব ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৮৬, ৮৮ ও ৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি এরশাদ সরকারের সময় জাতীয় সংসদে বিরােধী দলের নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারে তিনি মন্ত্রী হন। আ স ম রব বর্তমানে জাসদের একটি অংশের সভাপতি। তাঁর স্ত্রীর নাম তানিয়া রব। এ দম্পতির ৩ পুত্র সন্তান রয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার ও মনিরুজ্জামান শাহীন]।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড