You dont have javascript enabled! Please enable it! ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' প্রাপ্ত অন্নদা শঙ্কর রায় - সংগ্রামের নোটবুক

‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত অন্নদা শঙ্কর রায়

অন্নদা শঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) অফিসার, বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি, লেখক, সমালােচক এবং মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় বন্ধু। তিনি ১৯০৪ সালে উড়িষ্যার ধ্যানকানালে জন্মগ্রহণ। করেন। তিনি উড়িষ্যার রাবেনশ কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯২৭ সালে তিনি আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। বাংলা ও ব্রিটিশ-ভারতের বিভিন্ন স্থানে যােগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে ১৯৫১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর লেখালেখির শুরু ১৬ বছর বয়সে। প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার অনুসারী ও গান্ধীবাদী এ লেখক অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা। ভারতভাগবিরােধী অন্নদা শঙ্কর রায় তাঁর ‘তেলের শিশি ভাংলাে বলে খুখুর ওপর রাগ করাে’ বিখ্যাত এ কবিতার জন্য চিরস্মরণীয়। তিনি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মভূষণ-সহ বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক পুরস্কার ও খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অন্নদা শঙ্কর রায় বাঙালিদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ভারত ও অন্যান্য দেশের সাহিত্যক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর পরামর্শে ভারতে বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পীসাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি গঠিত হয়। তিনি এ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর ফলে সমগ্র ভারতে মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে জনমত গঠন এবং বাংলাদেশকে সর্বপ্রকার সহায়তা দানে ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়ােগ করতে সহায়ক হয়। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান’ বহুল উচ্চারিত এ কাব্য-পঙক্তি রচনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে অন্নদা শঙ্কর রায়কে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ (মরণােত্তর) প্রদান করে। ২০০২ সালের ২৮শে অক্টোবর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১ম খণ্ড