You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.27 | বাংলাদেশে গণহত্যা তথ্যানুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে - প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন | আনন্দবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশে গণহত্যা তথ্যানুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন
পার্থ চট্টোপাধ্যায়

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীতাজুদ্দীন আহমেদ বঙ্গভবনে আনন্দবাজার ও হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডারডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার বলেন, বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক রেডক্রশের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এর আগে আর একটি সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামারুজ্জমান জানান, ৯ মার্চ থেকে পাকিস্তানী সামরিকচক্র ও তার দোসরদের হাতে যেসব অসামরিক জনগণ মারা পড়েছেন তার সংখ্যা হবে আনুমানিক দশ লক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি পরে টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।
মুক্তিবাহিনীকে নিরস্ত্র করা হবে কি না সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যাদের হাতে অস্ত্র এসেছিল তারা অসাধারণ মানুষ। স্বাধীনতা আসার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার কোন প্রশ্ন ওঠে না। নিরস্ত্র করা হয় শত্রুকে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিবাহিনীর মর্যাদা হবে পূর্ণ মর্যাদা। তাদের জাতীয় সামরিক বাহিনীতে পরিণত করা হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ তারা গড়ে তুলবে। তাদের জাতীয় বীরের সম্মান দিয়ে চাকরি দেওয়া হবে, শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান ১ লক্ষ ১ হাজার ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিবাহিনী আছেন।

মুদ্রা ব্যবস্থা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার শীঘ্র বাজারে নতুন নোট ছাড়বেন। পুরনো পাকিস্তানী নোট বদলে এগুলি নেওয়া যাবে। তবে আগেকার বাতিল ১০০ টাকা ও তদুর্ধ্ব কোন নোট আর বদল করা যাবে না। সেগুলি বাতিলই থাকবে।

বন্ধুত্ব চীনের সঙ্গেও
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কোন সম্পর্ক রাখবেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা নবজাতক রাষ্ট্র। আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা থাকা উচিত নয়। আমরা সকলের কাছেই শিশুসুলভ হে দাবি করি। চীন কী করেছে না করেছে আমরা সরকারীভাবে জানি না। চীনের সভায় এক প্রস্তাবে ওই অভিমত জানানো হয়। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন এবং তার ক্রমোন্নতি কামনা করা হয়।
প্রস্তাবে সাম্রাজ্যবাদী মারকিন সরকার ও তিব্বতের স্বাধীনতা অপহরণকারী সমাজতন্ত্রের আদর্শ বিরোধী চীনের অপচেষ্টার প্রতি ধিক্কার, জঙ্গীশাহী পাকিস্তান সরকারের বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের সুপরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যার নিন্দা এবং অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য রেডক্রশের নিকট আবেদন
বাংলাদেশ রেডক্রশের চেয়ারম্যান ডাঃ আসাবুল হক রবিবার দমদমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক রেডক্রশকে যত দ্রুত সম্ভব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান।
ডাঃ হক জানান, জেনেভায় অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক রেডক্রশ লীগকে বলেছেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বিশ্বকে আর একটা সংকট থেকে রক্ষা করতে পারেন, কাজেই সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করা।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন