বাংলাদেশে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে জাতীয় বাহিনী হচ্ছে
ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর-দেশের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত সশস্ত্রবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়েছেন। কাল রাতে এক প্রেসনোটে বলা হয়েছে যে, দেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত সশস্ত্র নৌ ও বিমানবাহিনী দরকার। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য জাতীয় পুলিশ বাহিনী ও সেনাদল গঠন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এখনই জাতীয় মিলিসিয়া গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।
প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে : বাংলাদেশের নতুন পুলিশ বাহিনী হবে জনগণের পুলিশবাহিনী। আগের মতো উৎপীড়ন ও অত্যাচারের যন্ত্র হবে না।
নতুন অফিসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্যদের ট্রেনিং দেবার জন্য শীঘ্রই একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি গঠন করা হবে।
পি টি আই প্রেরিত প্রেসনোটে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য দেশপ্রেমিক, বীর ও সাহসী মুক্তিবাহিনীর সেনাদের পাওয়া যাবে।
গণবাহিনী
ঢাকা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও জানান : বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক করনেল উসমানি গতকাল সকালে মগবাজারে তাঁর বাড়িতে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা একটি বিরাট গণবাহিনী গড়ে তুলতে চান। এই গণবাহিনী নিয়মিত বাহিনীর চেয়ে আয়তনে অনেক বড় হবে। গণবাহিনী ও নিয়মিত বাহিনী এই নিয়ে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ জাতীয় বাহিনী।
বহিঃশত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনা ক্ষীণতর হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বৃহত্তম শক্তির অনেকের লক্ষ্য আমাদের দিকে পড়বে। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এইদিন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপটেন খোন্দকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কয়েকটি বিমান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তাঁরা ভবিষ্যতে একটি সুদক্ষ বিমানবাহিনী গড়ে তোলাবার জন্য সচেষ্ট হচ্ছেন।
আজ বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছেন গণবাহিনীর উপদেষ্টা সমিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
দৈনিক আনন্দবাজার, ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন