প্রসঙ্গক্রমে
ভারত-সোভিয়েত চুক্তি ও বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন
কমিউনিস্ট পার্টির আগামী নবম কংগ্রেসে আলোচনার জন্য পার্টির জাতীয় পরিষদে গৃহীত খসড়া প্রস্তাবাবলীর ৭নং ধারায় বলা হয়েছে। বাঙলাদেশের জনগণের বিপ্লবী সংগ্রাম ভারত উপমাহাদেশে প্রচণ্ড সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবী তাৎপর্যের সূচনা করেছে। এই বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের পশ্চাদভূমিতে দাঁড়িয়ে ভারত সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির মূল্যকে উপলব্ধি করতে হবে। বাঙলাদেশ প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আমেদ স্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, বাঙলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা, শান্তি-সমৃদ্ধি এবং সকল প্রকার শোষণ বন্ধ করার সংগ্রামে ভারত- সোভিয়েত চুক্তি ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। তিনি সঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছেন, যেখানেই নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষ স্বাধিকার অর্জনের জন্য লড়াই করছে, সেখানেই সোভিয়েত তার বন্ধুত্বের হাতকে সম্প্রসারিত করেছে। সদ্য-স্বাক্ষরিত চুক্তিটি তারই একটি বিশিষ্ট নিদর্শন।
নিছক আদর্শবাদ নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই নির্ণীত হয় কে শত্রু, কে মিত্র। বাঙলাদেশের বিপ্লবী জনতা মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনাকে উপলব্ধি করতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক বিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান নিক্সন-মাও আঁতাতের পরিপ্রেক্ষিতে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইয়াহিয়া-নিক্সন ষড়যন্ত্রের চরিত্রটিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ পিণ্ডি একনায়কতন্ত্র বাঙলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর যেভাবে লুণ্ঠন, ধ্বংস ও হত্যাকাণ্ডের রথ চালিয়েছে এবং এই স্বাধিকার সংগ্রামের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সমর্থন যেভাবে সোচ্চার হয়ে উঠেছে-তা বাঙলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তব উপলব্ধির সামনে ঠেলে দিয়েছে। তিনি অত্যন্ত খেদের সঙ্গেই বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, যারা পাকিস্তানকে সামরিক চুক্তির মধ্যে বেঁধে রাখতে চায়, তারা বাঙলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে। বলা বাহুল্য, এখানে তাজউদ্দিনের অভিযোগ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অভিমুখেই ধাবিত। আফ্রিকা, ভিয়েতনাম ও অন্যত্র যেখানেই জনগণ সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ ও শোষণের থাবা থেকে জাতীয়…
দৈনিক কালান্তর, ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন