রাজাকাররাও আর বিশ্বাসী নয়
ঢাকা ২৮ শে অক্টোবর- এক জেলার রাজাকারদের অন্য জেলায় ব্যাপকভাবে বদলি করে মুক্তিবাহিনীর মোকাবিলা করবার কাছে নিয়োগ করতে পাক হানাদাররা উঠে পড়ে লেগেছে। পাক বাহিনী শহর, গ্রাম, গঞ্জ থেকে সক্ষম লোকদের এক বিশেষ আদেশ বলে সামরিক ছাউনীতে নিয়ে গিয়ে মোটামুটি গোছের একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজাকার বাহিনীতে সামিল হতে বাধ্য করছে।
জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজাকারদের রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি এলাকায় প্রেরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির ধারণা দলে দলে মুক্তিবাহিনীর হাতে রাজাকারদের আত্মসমর্পণের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের জন্যই এক জেলার লোকদের অন্য জেলায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর হাতে ধৃত বেশ কিছু সংখ্যক রাজাকারদের মধ্যে বিভিন্ন জেলার লোক দেখা গেছে। ধৃত রাজাকারদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, পাক বাহিনী এক ফতোয়া জারী করে তাদের রাজাকার বাহিনীতে প্রবেশ করতে বাধ্য করছে।
জনৈক রাজাকার বলেন যে, অনেকে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধাচারণের ভূমিকা প্রদর্শন করে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে কারণ এর ফলে অতি সহজে যদি প্রাণে বেঁচে থাকা যায় তা হলে অস্ত্রশস্ত্র সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের নামে মুক্ত জীবনের অধিকারী হওয়া সম্ভব হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য, এত সাবধানতা সত্ত্বেও খান সেনারা রাজাকারদের আত্মসমর্পণ আটকাতে পারছে না। কারণ জেলাব্যাপী ব্যাপকভাবে বদলি করেও রাজাকারদের মানসিক গতিকে অর্থাৎ বাঙালীর বাংলাদেশ প্রীতিকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। যদিও ব্যতিক্রম কিছু বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতালোভী ইয়াহিয়া তাবেদার।
বাংলাদেশ ॥ ১ : ১৯ ॥ ১ নভেম্বর, ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন