পাঞ্জাবী পুঁজিপতি ও সেনাবাহিনীর স্বার্থেই চালান হচ্ছে বাংলাদেশে গণহত্যা- সীমান্তগান্ধী
খোদাই খিত্মতগার নেতা ও সীমান্তগান্ধী খান আবদুল গাফফার খান গত বাইশে মে এক বিবৃতিতে অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঞ্জাবী সেনাবাহিনীর গণ-হত্যা বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন।
জনাব গাফফার খান বলেন, বাঙলাদেশে বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে তা আসলে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্যে নয়, বরং পাঞ্জাবী স্বার্থ রক্ষার জন্যেই চালানো হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পাঞ্জাবের জনাকয়েক সমর নায়ক ও পুঁজিপতির স্বার্থে এ যুদ্ধ চালানো হচ্ছে।
খান আবদুল গাফফার খান বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র অপরাধ তারা বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করেছে এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার দাবী করছে। তিনি বলেন, বাঙালীরা পাকিস্তান ধ্বংসের জন্যে দায়ী নয়। এ জন্যে যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকে, তাঁরা হলেন ভুট্টো কাইয়ুম ও পাঞ্জাবী চক্র।
পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনা করে খান সাহেব বলেন, ভারতের অন্য কোন প্রদেশে যখন মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা গঠিত হতে পারেনি তখন বাংলাদেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো মুসলিম লীগ সরকার। বাংলাদেশের মুসলমানরা সেদিন পাকিস্তানের দাবী সমর্থন না করলে, পাকিস্তানের জন্মই হতো না। [ভাগ্যের] নির্ম্মম পরিহাস আজ সেই বাঙালীদের বিরুদ্ধেই তোলা হয়েছে পাকিস্তান ভঙ্গের অভিযোগ। তিনি আরো বলেন, যে বাঙালী মুসলমানরা মনেপ্রাণে মুসলমান, আজ তাদেরই বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে ইসলাম ধ্বংসের অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচী পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী বলে স্বার্থবাদী মহল যে বাজে অজুহাত খাড়া করেছে তার জওয়াবে বাদশাহ খান বলেন, ছয়দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে পূর্বাহ্নে তা নিষিদ্ধ করা হলো না কেন? অথবা আওয়ামী লীগকে ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে দেয়া হলো কেন? তিনি আরো জিজ্ঞাসা করেন, ছয় দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে ছয়দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে জয়লাভের পর শেখ সাহেবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইয়াহিয়া অভিহিত করেছিলেন কেন? অথবা ছয় দফা যদি পাকিস্তানের স্বার্থের পরিপন্থী বা শেখ মুজিব যদি দেশদ্রোহী হয়ে থাকেন তাহলে ইয়াহিয়া খান সাহেব নির্বাচনে জয় লাভের পর শেখ মুজিব ও তাঁর দলকে অভিনন্দনইবা জানিয়েছিলেন কেন?
এ প্রসঙ্গে খান আবদুল গফফার খান বলেন জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগুরু হয়েও বাংলাদেশের যদি আজ এ অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে সিন্ধু সীমান্তের মতো সংখ্যালঘুদের ভাগ্যে যে কি ঘটতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সীমান্ত গান্ধী জানান যে বাংলাদেশে আজ যা ঘটছে সে ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে তিনি রাজী আছেন বলে ইয়াহিয়াকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি। সে জন্যেই বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান যে, এখনো তিনি তাঁর প্রস্তাবে অটল রয়েছেন এবং পাকিস্তান সরকার সম্মত থাকলে তিনি পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি নিয়ে বাংলাদেশে যেতে রাজী আছেন। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
উপসংহারে সীমান্ত গান্ধী বলেন, আজ বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তা পাঞ্জাবের সেনাবাহিনী ও পুঁজিপতিদের স্বার্থে ও নির্দেশেই ঘটেছে।
জয় বাংলা ॥ ১ : ৪ ॥ ২ জুন ১৯৭১
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ . ১ম খণ্ড – মুনতাসীর মামুন