দৈনিক ইত্তেফাক
৭ই জুন ১৯৬৯
৬-দফা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি : শেখ মুজিব
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
আজ ঐতিহাসিক ৭ই জুন। ১৯৬৬ সালে ঠিক এই দিনটিতে দেশবাসীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং বৈষম্য ও শোষণবিহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলনের পতাকা উর্ধ্বে তুলিয়া ধরিতে গিয়া মোনায়েম সরকারের পুলিসের গুলীতে আত্মাহুতি দিয়া ছিলেন এ দেশের কয়েকটি সোনার সন্তান। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের আহ্বানে সেই দিন ৬-দফা দাবীর সমর্থনে সারা প্রদেশে হরতাল পালন করা হয় এবং এক পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টংগীতে হরতাল পালনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিস গুলীবর্ষণ করে। বহু সংখ্যক লোককে এই দিন গ্রেফতার করা হয়। সেদিন যাঁহারা প্রাণ বিসর্জন দিয়াছিলেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য আজ (শনিবার) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হইয়াছে। গতরাত্রে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দিন জানান যে, এই দিনটিতে বিশেষ মোনাজাত ও মিলাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করা ও তাহাদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য আওয়ামী লীগের সকল শাখার প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে।
এই উপলক্ষে আজ (শনিবার) মাগরেবের পরে ঢাকাস্থ আওয়ামী লীগ সদর দফতরে মিলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইয়াছে।
শেখ মুজিবের বাণী
৭ই জুন উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান বলেন, ছয় দফা আন্দোলনে শরিক হইয়া যাহারা শাহাদৎ বরণ করিয়াছেন, পরম শ্রদ্ধাভরে আমি আজ তাহাদের কথা স্মরণ করিতেছি। এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করিয়া অন্য যাহারা জেল-জুলুম ও হয়রানির শিকার হইয়াছেন তাদের কথাও আমি স্মরণ করি। ইহাদের সকলের কথা এদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধিকার অর্জন ও শোষণ বিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকিবে।
শেখ সাহেব বলেন, সেদিন আমি এবং আমার সহকর্মীদের অনেকে কারারুদ্ধ ছিলাম। কিন্তু সেদিন আমাদের মুক্তি এবং ছয় দফা দাবীর স্বপক্ষে আন্দোলন চালাইতে গিয়া যারা চিরতরে আমাদের ছাড়িয়া গিয়াছেন, সেই অজানা- অচেনা বন্ধুদের স্মৃতি আজ বার বার আমার চিত্ত ভারাক্রান্ত করিয়া তুলিতেছে। আমি সেই শহীদ ভাইদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ছাত্র সমাজের কর্মসূচী
আজ (শনিবার) বিকালে ৭ই জুনের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় সর্বদলীয় ছাত্রসমাজের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণে একটি মিলাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইয়াছে।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯