দৈনিক পয়গাম
১৫ই মার্চ ১৯৬৯
সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ মুজিব : ভাসানীর রাজনীতি ত্যাগ করা উচিত :
কয়েকজন নেতার সমর্থনের অভাবে দাবী-দাওয়া আদায় হয় নাই
ঢাকা, ১৪ই মার্চ।— ৬ দফা পন্থী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান আজ এখানে বলেন, মওলানা ভাসানীর সাম্প্রতিক কথাবার্তার মধ্যে কোন সামঞ্জস্য নাই বলিয়া রাজনীতি হইতে মওলানা সাহেবের অবসর গ্রহণ করা উচিত। শেখ মুজিব বলেন, “তাহার (মওলানা ভাসানী) বয়স “৮৬ বৎসর হইয়াছেন।”
রাওয়ালপিণ্ডি হইতে এখানে আগমনের পর স্বীয় বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গোলটেবিল বৈঠকে জনসাধারণের দাবী যৌথভাবে পেশ করার জন্য তিনি উহাতে যোগদানের উদ্দেশ্যে মওলানা সাহেবকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি উহা অস্বীকার করেন। কেন করেন, তাহা আমার জানা নাই।” শেখ মুজিব বলেন যে, গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের সকল নেতা যদি তাহাকে সমর্থন করিতেন তাহা হইলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের পক্ষে জনসাধারণের ন্যায্য দাবী স্বীকার করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না।
তিনি আরও বলেন, সেখানকার পরিবেশই ছিল এমন যে, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট বিলোপের দাবীর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হইলে তাহা মানিয়া নেওয়া হইত। কিন্তু দুঃখের বিষয় গোলটেবিল বৈঠকে নেতাদের অনেকে জনগণের নির্দেশ পালন করেন নাই। আওয়ামী লীগ নেতা বলেন যে, মেসার্স হামিদুল হক চৌধুরী, ফরিদ আহমদ, আবদুস সালাম খান, মাহমুদ আলী প্রমুখ নেতা গত ২২ বৎসরে কাণ্ডজ্ঞান ফিরিয়া পাইয়াছেন বলিয়া তিনি আশা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার এই আশা ব্যর্থ হইয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, ক্ষমতাসীন জান্তা এবং চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও মওলানা মওদুদীকে লইয়া গঠিত কুচক্র গত ২২ বৎসর যাবত যে খেলা খেলিয়া আসিতেছেন, এখন তাহারা উহা আবার শুরু করিয়াছেন।
তিনি এই সঙ্গে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালাইয়া যাইব।
তিনি বলেন যে, জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগ সদস্যগণ প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের প্রস্তাব মত শাসনতন্ত্রে দুইটি সংশোধনী সমর্থন করা ছাড়াও ৬ দফা ও ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের “পুরাপুরি সংশোধনী” প্রস্তাব পেশ করিবেন। শান্তি রক্ষা এবং এজেন্টদের উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানান। গভর্ণর জনাব আবদুল মোনয়েম খানের কথা উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, কেন যে তিনি এখনও ক্ষমতাসীন রহিয়াছেন, তাহা তিনি বুঝিতে অপারগ।
শেখ মুজিব বলেন, “কাহারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা তিনি সমীচীন মনে না করিলেও তিনি (মোনয়েম খান) এতই ন্যক্কারজনক যে তাহার সমালোচনা না করিয়া তিনি পারিতেছেন না। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনে যাহারা শিকার হন, তাহাদের কথা যখন আমার মনে পড়ে, তখন তাহার (গভর্ণর) চেহারা আমি ভুলিতে পারি না।
তিনি ডঃ শামসুজ্জোহা ও অন্যান্য ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করেন। -এপিপি
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯