You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.03.15 | ২১ বৎসরের সঞ্চিত সমস্যাবলী সমাধানের সময় আসিয়াছে | দৈনিক পয়গাম - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পয়গাম
১৫ই মার্চ ১৯৬৯
২১ বৎসরের সঞ্চিত সমস্যাবলী সমাধানের সময় আসিয়াছে

রাওয়ালপিণ্ডি, ১৩ই মার্চ।- পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান এখানে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে গত সোমবার ভাষণ দান প্রসঙ্গে বলেন যে, দেশ আজ এক সংকটের সম্মুখীন এবং এই সংকট দেশের ভিত্তিকে কাপাইয়া তুলিয়াছে। যাহারা দেশকে ভালবাসেন এবং পাকিস্তান অর্জনের জন্য যে আত্মত্যাগের প্রয়োজন হইয়াছিল উহা যাহাদের স্মরণ রহিয়াছে তাহারা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছেন। এই সংকট নিরসনের জন্য উহার প্রকৃতি নিরুপণ এবং কারণ অনুধাবন করা অতীব প্রয়োজন। দেশের এই গণ অভ্যুত্থানের মুহূর্তে মৌলিক সমস্যাসমূহ সমাধানে ব্যর্থ হওয়ার চাইতে আর চরম পরিণতি কিছুই হইতে পারে না। দেশের এই সমস্ত সমস্যা গত ২১ বৎসর ধরিয়াই এড়াইয়া যাওয়া হইয়াছে। উহার সমাধানের সময় আসিয়াছে এবং জনগণের সমস্যাসমূহ ব্যাপকভাবে সমাধানের পথ অবশ্যই বাহির হইবে বলিয়া তিনি বিশ্বাস করেন।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দাবী- দাওয়া পুংখানুপুংখ রূপে পরীক্ষা করিলে দেখা যাইবে যে, তিনটি মৌলিক বিষয় উহার মধ্যে নিহিত রহিয়াছে। উক্ত তিনটি মৌলিক সমস্যার একটি হইতেছে রাজনৈতিক অধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হইতেছে অর্থনৈতিক অবিচার। ইহার ফলে কৃষক, শ্রমিক এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী সহ দেশের বিপুল সংখ্যক লোককে ভুগিতে হইতেছে। কেন না এই সকল শ্রেণীর লোকদেরই ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির আকারে উন্নয়নে ব্যয়ভার বহন করিতেছে। অপর দিকে এই সকল উন্নয়নের লভ্যাংশ ক্রমশঃ কয়েকটি পরিবারের হাতে চলিয়া যাইতেছে।
তৃতীয় সমস্যাটি হইতেছে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ মনে করে যে, বর্তমান শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাবলী তাহাদের মৌলিক স্বার্থে সর্বদাই আঘাত হানিয়াছে। সাবেক সংখ্যালঘু প্রদেশসমূহও বর্তমান শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাবলীর ফলে একই অসুবিধার সম্মুখীন হইয়াছে।
৪৩৭
শেখ সাহেব বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানী ছাত্রদের ১১ দফা দাবী এবং আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচীতেও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত বিষয়টি রহিয়াছে। দেশের অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা পদ্ধতি পুনর্গঠনের বিষয়টিও ছাত্রদের ১১ দফা দাবীর মধ্যে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। তিনি বলেন যে, তাহার দলে ৬ দফা কর্মসূচীতে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা পরিষ্কারভাবে স্বীকার করা হইয়াছে।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি এই সকল জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা চালাইয়াছে। এই আলোচনায় ফেডারেল পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র, প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচন প্রথা প্রবর্তনের ব্যাপারে ডাক সর্বদাই শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে মতৈক্য হইয়াছে। ইহা ছাড়াও কমিটির সদস্যগণ নিম্নলিখিত বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে মতৈক্যে উপনীত হইয়াছেন: (ক) এক ইউনিট বাতিল এবং পশ্চিম পাকিস্তান সাব-ফেডারেশন গঠন, (খ) পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন।
তিনি বলেন যে, দেশের সমস্যাবলী সমাধানের ব্যাপারে আজ আমরা এই সম্মেলনে সমবেত হইয়াছি। সুতরাং এই গোলটেবিল বৈঠকে ইহা উল্লেখ করা আমি আমার প্রধান কর্তব্য বলিয়া মনে করি যে, শক্তিশালী পাকিস্তান গঠনের ব্যাপারে ৬-দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের গুরুত্ব এখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সকলেই অনুধাবন করিতে সক্ষম হইবেন। -এপিপি

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯