You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.03.14 | স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট প্রশ্নে সমর্থন না করায় : শেখ মুজিব কর্তৃক ‘ডাক’ পরিত্যাগ | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৪ই মার্চ ১৯৬৯
স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট প্রশ্নে সমর্থন না করায় : শেখ মুজিব কর্তৃক ‘ডাক’ পরিত্যাগ

রাওয়ালপিণ্ডি, ১৩ই মার্চ।-আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান আজ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের (ডাক) সহিত তাহার দলের সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করিয়াছেন।
আজ অপরাহ্নে পুর্ব্ব পাকিস্তান ভবনে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য প্রকাশকালে শেখ সাহেব আরো বলেন যে, পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট বিলোপ দাবীর প্রতি সমর্থনদানে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যর্থতাই এই সম্পর্কচ্ছেদের কারণ। কেননা জনপ্রিয় এই দুইটি দাবীর স্বীকৃতি ছাড়া কোন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়।
শেখ সাহেব বলেন, যে দাবী আদায়ের জন্য জনগণের মধ্যে বহুজন প্রাণ বিসর্জ্জন ও বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ করিয়াছেন সেই দাবীর প্রতি স্বীকৃতি দানে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যর্থতা অত্যন্ত দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ প্রধান ঘোষণা করেন যে, জনগণের মৌলিক সমস্যা সমুহের সমাধানের জন্য তাহার দল অন্যান্য দলের সহিত অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালাইয়া যাইবে। পাকিস্তানের সকল অংশের জনগণের মৌলিক দাবীসমূহের সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানের উপর একটি শক্তিশালী ও অখণ্ড পাকিস্তান গঠন সম্ভব বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন যে, দেশের বর্ত্তমান ‘চরম সংকট’ নিরসনের উদ্দেশ্যে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট বিলোপ দাবীর সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তিনি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি আকুল আহ্বান জানাইয়াছিলেন কিন্তু ন্যাপ, জনাব নূরুল আমিন ও দলনিরপেক্ষ সদস্য বিচারপতি জনাব এস এম মোর্শেদ ব্যতীত গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এই দাবীর প্রতি স্বীকৃতি দানে ব্যর্থ হওয়ায় শেখ সাহেব দুঃখ প্রকাশ করেন।
,
শেখ সাহেব বলেন যে, জনগণের মৌলিক সমস্যাবলীর সুষ্ঠ সমাধানের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ অধিকতর দায়িত্বের সহিত একটি সম্মিলিত ফর্মূলা বাহির করিবেন বলিয়া তিনি বিশ্বাস করিতেন এবং প্রেসিডেন্টের ইহা গ্রহণ ব্যতীত উপায় ছিল না।
আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিকদের আরও জানান যে, পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে তিনি সুস্পষ্ট প্রস্তাবও দিয়াছিলেন এবং সকল রাজনৈতিক দলের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই ব্যাপারে বিস্তারিত প্রস্তাব প্রণয়ন করার কথাও উল্লেখ করিয়াছিলেন। শেখ সাহেব বলেন যে, বর্ত্তমান শাসনতন্ত্রকে পার্লামেন্টারী পদ্ধতিতে রূপান্তরিত ও প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্ব্বাচনের দাবী প্রেসিডেণ্ট মানিয়া লইয়াছেন। কিন্তু পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট বিলোপের দাবী উপেক্ষিতই রহিয়াছে। এতদ্ব্যতীত সংখ্যাসাম্যের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচন এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনও পূর্বের ন্যায় অপরিবর্তিত রহিয়া গিয়াছে। এই অবস্থায় জনগণের মৌলিক সমস্যাবলী অমীমাংসিত রহিয়া গিয়াছে বলিয়া শেখ সাহেব উল্লেখ করেন।
বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাহার দল নির্ব্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবে কিনা জানিতে চাওয়া হইলে শেখ মুজিব বলেন যে, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তিনি পার্টির কার্য্যনির্ব্বাহক পরিষদের একটি বৈঠক আহ্বান করিবেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক ‘ডাক’ এর দুই দফা দাবী মানিয়া লওয়াকে তিনি ‘কনসেশন’ বলিয়া মনে করেন কিনা জানিতে চাওয়া হইলে শেখ সাহেব বলেন যে, ইহা কোন কনসেশনের প্রশ্ন নহে। প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা হইয়াছে তাই তিনি দুইটি দাবী মানিয়া লইয়াছেন।
গোলটেবিল বৈঠককে তিনি সফল বা ব্যর্থ মনে করেন কিনা প্রশ্ন করা হইলে শেখ সাহেব বলেন যে, ইহা ব্যর্থ হইয়াছে কিনা তাহা আমি বলিব না। আমি আমার মতামত জানাইয়া দিয়াছি। আওয়ামী লীগ প্রধান অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি সরকারের নিকট শাসনতন্ত্রের সংশোধনী পেশ করিতে তাহার কোন আপত্তি নাই। সরকারের পছন্দ হইলে তাহা বিবেচনা করিয়া দেখিতে পারেন।
পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে আন্দোলন অব্যাহত থাকিবে কিনা জনৈক বিদেশী সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন যে, শুধুমাত্র পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে কেন- সমগ্র পাকিস্তানেই অব্যাহত গতিতে আন্দোলন চলিতে থাকিবে। আওয়ামী লীগ একটি নিয়মতান্ত্রিক দল এবং শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পথেই আমরা আন্দোলন চালাইয়া যাইব। -এপিপি/পিপিআই

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯