সংবাদ
৭ই মার্চ ১৯৬৯
ডাক নেতৃবৃন্দসহ লাহোর যাত্রার প্রাক্কালে শেখ মুজিব বলেন :
‘ডাক’-এর পক্ষ হইতে গোলটেবিলে সর্বসম্মত বক্তব্য পেশের চেষ্টা করিব
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য ‘ডাক’ নেতৃবৃন্দ লাহোরে কেন্দ্রীয় ‘ডাক’-এর বৈঠকে এবং ২০ই মার্চ পিণ্ডি গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে লাহোরের পথে ঢাকা ত্যাগ করিয়াছেন।
বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সহিত এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, গোলটেবিল বৈঠকের আলোচ্যসূচী তাহার জানা নাই। তবে তাঁহার ধারণা শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে যে কোন দাবী এই বৈঠকে উত্থাপন করার সুযোগ রহিয়াছে।
গোলটেবিল বৈঠকে ‘ডাক’-এর পক্ষ হইতে যাহাতে একটি সর্বসম্মত বক্তব্য পেশ করা সম্ভব হয়, তজ্জন্য তিনি চেষ্টা চালাইয়া যাইবেন। একই সাথে তিনি আরও বলেন যে, ‘ডাক’ সভায় তিনি জোরালোভাবে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, পশ্চিম পাকিস্তানের সাবেক প্রদেশসমূহের পুনরুজ্জীবন এবং প্যারিটির বিলোপ সাধনপূর্বক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবী উত্থাপন করিবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ মুজিবর রহমানকে জনৈক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যে নূতন গণ-পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করা হইলে, তিনি স্বায়ত্তশাসন ও এক ইউনিট প্রভৃতি প্রশ্নের মীমাংসা স্থগিত রাখার পক্ষে মত দিবেন কিনা। শেখ মুজিব উত্তরে বলেন যে, “প্রশ্নটায় একটা যদি রহিয়াছে এবং তিনি এখনই এ সম্পর্কে কিছু বলিবেন না।”
উত্তর বঙ্গ প্রদেশ গঠনের প্রশ্ন অর্থহীন
জনৈক সাংবাদিকদের উত্তর বঙ্গ প্রদেশ গঠনের দাবীর প্রশ্নে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, এই সব কথায় কান দেওয়া অর্থহীন। এই সব দাবীর পেছনে কাহারা রহিয়াছে, তাহা সকলেরই জানা আছে। তিনি বলেন, পূর্ব বাংলাকে বিভক্ত করার কোন চক্রান্তকে বরদাশত করা হইবে না।
সাংবাদিকদের দাবীর প্রশ্নে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, যথাশীঘ্র সম্ভব সাংবাদিকদের জন্য দ্বিতীয় বেতন বোর্ড গঠন করা উচিত। তিনি বলেন যে, সাংবাদিকদের দাবী-দাওয়া বিবেচনা করা উচিত। তিনি সাংবাদিকদের যথার্থ দাবী দাওয়ার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল করিতে হইবে।
তিনি আরও বলেন যে, তাহারা জাতীয় প্রেস্ট্রাস্ট বিলোপ ও প্রোগ্রেসিভ পেপার লিমিটেডের মালিকানাধীন পত্রিকা উহার সাবেক মালিককে প্রত্যর্পণের দাবী জানাইয়াছে।
তিনি এপিপিকে ব্যক্তিগত মালিকানায় হস্তান্তরের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯