বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বেদরদি খেলা
রমাপ্রসাদ মল্লিক
বাংলাদেশকে নিয়ে তুমুল প্রচারই সার, বাংলাদেশের জনগণকে প্রকৃত সাহায্য করার বেলায় ভারত সরকার কিন্তু কোনাে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তার ব্যবস্থা বাড়িয়ে তােলার জন্য কয়েক ব্যাটেলিয়ন সৈন্য রিকুট করা আরম্ভ হয়ে গিয়েছে, আরম্ভ হয়ে গিয়েছে সেগুলােকে অস্ত্রসজ্জিত করা এবং উপযুক্ত পরিমাণ সমর-সম্ভার উৎপাদনের। এ জন্য (এক) ডিফেন্স সম্পৃক্ত উৎপাদনিক সংস্থাগুলাের কাজকর্ম ত্বরান্বিত ও সুসংহত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় বাের্ড গঠন করা হয়েছে এবং (দুই) সেনাবাহিনীর বর্তমান শক্তি আট লক্ষ পঁচিশ হাজার থেকে আট লক্ষ আঠাশ হাজার পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া আর্মি থেকে স্বাভাবিক নিয়মে যে সৈনিকদের (জওয়ান, বিশেষত অফিসার) অবসর গ্রহণের কথা তাদের এবং আর্মি রিজার্ভ থেকে পুনর্বার আর্মিতে নিযুক্ত করার উদ্দেশে রিজার্ভ তালিকাভুক্ত বাছাই ব্যক্তিদের ডেকে নেয়া হচ্ছে। এ কথায়, শুরু হয়েছে সাজ-সাজ ভাব।
অথচ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ এ বছরেই শতকরা ৫.৫ বেড়ে ১২৪১.৬৮ কোটিতে ঠেকেছে। আর্মির শক্তিবৃদ্ধি এই খরচ আরও বাড়িয়ে তুলবে, যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে যে, নতুন সৈন্যদলগুলােকে মজুত অস্ত্রভাণ্ডার থেকেই সুসজ্জিত করা সম্ভব এবং সেনাবাহিনীর পক্ষে এ জন্য কোনাে যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনতে হবে না। কথাটা আংশিক সত্য। যুদ্ধোদ্যম ছাড়াও অপর একটা দিক আছে। বাংলাদেশ থেকে আগত তথাকার নাগরিকদের সংখ্যা সরকারিভাবে বলা হয়েছে বার লক্ষ।
আসল চাপ আসার এখনও বাকি। আসামের মন্ত্রী শ্রীকে পি ত্রিপাঠী অনুমান করেছেন যে, এ সমস্ত উদ্বাস্তুদের জন্য ভারতের বাৎসরিক ব্যয় অনুন একশ কোটি টাকা অবধি যেতে পারে, যার অনিবার্য ফলরূপে ভারতের অর্থনৈতিক এবং সামরিক দুর্বলতা বেড়ে চলবে। সুতরাং ভারতের শাসক শ্রেণীর বিশেষ শক্তিশালী মহল থেকে ভারত সরকারের ওপর গােপন প্রভাব বিস্তৃত হবে, যাতে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবার পূর্বেই সামরিক অভিযানের বীরত্বব্যঞ্জক প্রদর্শনী করানাে হয়, সম্ভবত পুব ও পশ্চিম দুই সীমান্তেই। এমনি একটা ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যে চলে না, সে সম্পর্কে পাশ্চাত্য ধনতন্ত্রী দেশগুলাে যথেষ্ট ওয়াকেবহাল। | সম্প্রতি বিত্ততন্ত্রী ভারত সরকারের সর্বোত্তম ঋণপ্রদায়ী বন্ধু তথা পৃষ্ঠপােষক আমেরিকায় বাংলাদেশ সঙ্কট-উদ্ভূত পরিণতি সম্পর্কে সাবধানবাণী বিতরণ করা হয়েছে : ভারত এবং পাকিস্তান দুয়েরই উচিত পারস্পরিক বাগযুদ্ধকে শান্ত করা, যাতে বর্তমান উত্তাল অবস্থান হাতের বাইরে চলে না যায়। পাকিস্তানের পক্ষে বিশেষত জানা দরকার যখন পূর্ববঙ্গকে দাবানাের ব্যাপারে তার রণসম্পদে অতিরিক্ত টান পড়েছে, তখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া আত্মহত্যার সমতুল্য। [বাল্টিমাের সান’ দোসরা এপ্রিল, উনিশ শ একাত্তর]।
কেন যে আমেরিকাই এগিয়ে এসেছে ভারত এবং পাকিস্তানের মাঝে একটা মিটমাটের মুরুব্বিয়ানার ভূমিকা নিয়ে, তার কারণ স্বতঃপ্রতিভাত। ভারতকে আমেরিকা কাজ পর্যন্ত সাত হাজার চারশাে বাইশ কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশে সর্ববৃহৎ পার্টনার হিসেবে। বলা বাহুল্য, নব উপনিবেশী কায়দায় এই বিরাট অঙ্কের মূলধন ভারতের লগ্নী করার পর আমেরিকা নিশ্চয়ই চেষ্টা করে যাবে যাতে ভারতের শাসকবর্গ মৌরসী পাট্টা গেড়ে বসতে পারে এবং যাতে এই উপমহাদেশে ভারত এবং পাকিস্তানের বর্তমান শাসকবৃন্দ আমেরিকার পােষমানা ভূমিকা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সামরিক এক আধটু যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা সত্ত্বেও মিলে মিশে থাকে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তান সরকারকেও সাহায্য করার উদ্দেশে আমেরিকার অনুপ্রেরণায় গঠিত রাষ্ট্র সমাবেশ (বিশ্বব্যাঙ্কসহ) অদ্যবধি যে বিপুল সাহায্য দিয়ে এসেছে তার মােট পরিমাণ হলাে, পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণে তিন হাজার আটশাে কোটি ডলার। এ বছরও ৪৩.৮ কোটি ডলার দেবার কথা ছিল পাকিস্তানকে, দেয়া হতােও যদি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা নর-সংহারের বীভৎসতা সারা বিশ্বে চাউর না হতাে। ঋণগ্রস্ত পাকিস্তান সরকারের কর্জমকুব আবেদনের ওপর আপাতত সুযােগ নেবার তালে পাশ্চাত্য ধনতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলাে সামান্য একটু চাপ দেবার চেষ্টা করেছিল।
তাতেই পাকিস্তানের পুঁজিপতি-সামরিকতন্ত্রের গােষ্ঠীস্বার্থে আঘাত পড়ার দরুণ প্রচণ্ড চিকার উঠেছে। তিরিশে জুন উনিশ শাে একাত্তর অবধি পাকিস্তানের দেয় (কর্জশােধ বাবদ) পঞ্চাশ লক্ষ ডলার কিস্তি পেমেন্টের তারিখ। এই তারিখ এগিয়ে দিতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অধ্যক্ষ রবার্ট ম্যাকনামারা অস্বীকার করেছেন। অথচ এদিকে বাৎসরিক ঋণ শােধের মােট পরিমাণ বাইশ কোটি ডলার। সামান্য চাপেই পাকিস্তানের উপরােক্ত কায়েমীস্বার্থ গােসসায় উদ্গার করেছে : ‘এই বৃহৎ রাষ্ট্রগুলাে বুঝতে চায় না যে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নতি এখন স্বভাবতই স্তব্ধ হয়ে আছে, কেননা তার ভৌগােলিক অখণ্ডতার লড়াই পেয়েছে অগ্রাধিকার। মাল জমে যাবার দরুন শিল্পে গণ্ডগােল দেখা দিয়েছে। অতীতের সূচক তথ্য থেকে জানা যায় যে, গত দু’মাসেই সমুদ্রপথে চালিত বাণিজ্যে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭.৪ কোটি টাকায়। রপ্তানি বন্ধের দরুন ক্ষতির পরিমাণ তিরিশ থেকে চল্লিশ কোটি পর্যন্ত অনুমান করা যায়।
(পাকিস্তান টাইমস] | কেন এই ক্রোধ বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়, কারণ ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তানকে ঔপনিবেশিক কায়দায় মাল বেচে এবং ওখানকার কৃষিজাত অর্থকরী পণ্য রপ্তানি করে পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী, বিশেষত মােমিন ভােরা ইত্যাদি আটটি একচেটে বিত্তপুঁজির মালিকগােষ্ঠী এতদিন লাল হয়ে আয়েস-আরামের গদীতে নশীন হয়েছিল। আজ পাশ্চাত্য ধনতন্ত্রী দেশগুলাে, বিশেষত আমেরিকা চায়, ভারত এবং চীনের মধ্যে একটা বাড়তি ‘বাধকরাষ্ট্র’ বা বাফার স্টেট খাড়া করা, এর জন্য বার্মার মতাে একটা ভারসাম্যহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করা যায় না। সুতরাং অর্থ সাহায্যের থলির মুখ সঙ্কুচিত করে পাকিস্তানের অধুনা শাসকচক্রকে একটু সামান্য শিক্ষা দিয়ে সম্বিত ফেরানাের চেষ্টা শুরু হতে না হতেই এই চক্র থেকে হুঙ্কার উঠেছে, টাকা না দাও চীনের কাছে যাব। আসলে এটা একটা ভঁওতা ধমকি মাত্র।
চীনের প্রস্তাবিত অর্থ সাহায্য আসলে কোনাে ঋণ মারফত পুঁজিলগ্নী নয়, সিংকিয়াং থেকে পাককবলিত কাশ্মীরের গিলটি হুনজা অঞ্চল অবধি যে রাস্তা, চীন এবং পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের যুগ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়ে এক ঐতিহাসিক ব্যবসা-বাণিজ্যিক পথকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, সেই পথে চীন চায় তার রপ্তানিযােগ্য উদ্বৃত্ত শিল্প পণ্য পাকিস্তানে পৌছিয়ে দিতে। এমনি চৈনিক রপ্তানির আনুমানিক মূল্য নাকি বছরে পনেরাে কোটি পাউন্ড। করাচিস্থ বন্দর কর্তৃপক্ষ তাই মনে করেন। চীনের প্রস্তাব পাকিস্তান গ্রহণ করলে কেবল যে সমুদ্রপথে বাণিজ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা কম করে ত্রিশটি বাড়াতে হবে তাই নয়, এর ফলে পাকিস্তানি জনগণের ক্রেতাসম্প্রদায় উপকৃত হবে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি প্রাইভেট সেক্টরের ধনপতি মালিকবর্গ তাদের এতদিনের চালু মুনাফা শােষণ বজায় রাখতে পারবে না।
সুতরাং জাপান, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকা তিনটি রাষ্ট্র আজও অর্থ সাহায্যের গ্যাড়াকলে পুঁজি রপ্তানি করে এবং নতুন কলেবর উপনিবেশ অধিকারও করে থাকে। এখন পাকিস্তান সরকারকে বাগে আনবার জন্য পর্দান্তরালে শাসানি দিচেছ পূর্ব বাংলার একটা গণতন্ত্রী সরকার খাড়া হতে দেবার জন্য, যা বকলমে আমেরিকার বশংবদ হয়ে থাকবে। পাকিস্তানের মুদ্রামূল্য বস্তুত এখন নিদারুণভাবে গড়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবাজারে এক ডলারের তুলনায় পাকিস্তানি মুদ্রার বিনিময় মূল্য ৪.৭১ টাকা নেই; ফি ডলার পিছু এগারাে টাকা।
এখন বিচার্য জাপান যদি তার প্রতিশ্রুত তিন কোটি ডলার, ব্রিটেন সাড়ে চার কোটি ডলার এবং আমেরিকা আট কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ সাহায্য আপাতত বন্ধ রাখেও, তাহলেই কি পাকিস্তানের বর্তমান জেদি এবং সুচতুর শাসক গােষ্ঠীকে কাবু করতে পারবে। বর্তমান লেখকের ধারণায়, আমেরিকা এবং তার সঙ্গী অপরাপর ধনতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলাে পাকিস্তানের উক্ত গােষ্ঠীকে বশংবদ বানাবার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। কারণ, তাদের অতি-চালাকিপনা এবং দ্বিধা। বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করতে এরা চায় না মুখে মায়াকান্না কাঁদলেও। এদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভিতটাকে একটু ঢিলে করে দিয়ে দুতরফের পাকিস্তানকেই (পশ্চিম এবং পূর্ব) ধীরে ধীরে নয়া সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির খপ্পরে আনা।
কিন্তু এদের হিসেবে গরমিল একটু থেকে গেছল; তার কারণ এ নয় যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপ্রত্যাশিত দ্রুততার সঙ্গে পূর্ব বাংলায় জনগণের প্রতিরােধ ভাঙবার উদ্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কারণ আসলে এই- এরা, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বিশেষত সরলপ্রাণ এবং ঈষৎ বােকা মুজিবর রহমানের সঙ্গে নিষ্ঠুর খেলা খেলেছে। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী খ্যাপার মতাে নিরস্ত্র এবং প্রায় অপ্রস্তুত জনতার ওপর চরম নিষ্পেষণ আরম্ভ করলাে, তখন এই পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ মুরুব্বি সাজার বাহবা চাইলেও, দায়িত্ব নিল
অর্থনৈতিক সুতাে টান, ক্ষমতা রাজনীতির পরােক্ষ প্রয়ােগ, কূটনৈতিক সুযােগ-সুবিধা ব্যবহার করে আশ্রয়দান–এমনি অনেক কৌশল এদের জানা ছিল কিন্তু গ্রহণ করে ঝুঁকি নেবার সাহস হয়নি।
ক্রমশ পাকিস্তানের সামরিকতন্ত্র বনাম বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের সংঘর্ষ প্রথম অধ্যায় অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ে উপস্থিত। ভৌগােলিক অর্থ কর্তৃত্ব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে এসে যাওয়ায় এই শক্তিবর্গ এখন অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের অজুহাত তুলে পিছিয়ে এসেছে। এদের আশঙ্কা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র ও নেতৃত্ব রূপান্তরিত হয়ে যাবে। তখন নবােদিত বাংলাদেশে, গেরিলাযুদ্ধের দৈনন্দিন লড়াই, জনসংযােগ, সমান্তরাল সরকার চালিয়ে জন-প্রতিরােধকে আরও পােক্ত আরও দৃঢ় আরও সুসংহত করার কার্যক্রমে সফলকাম যে নতুন নেতৃত্ব সঞ্চালকরূপে আবির্ভূত হবে তারা এই পশ্চিমী রাষ্ট্রদের ক্ষমতাপ্রিয়তায় বাদ সাধবে- পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণও সম্ভবত ততদিনে যুদ্ধ প্রতিরােধী আন্দোলনে। মেতে উঠতে বাধ্য হবে, বাস্তব ঘটনাচক্রের কঠিন শিক্ষায়। বলাই বাহুল্য, যত দেরি হবে এই দ্বিতীয় অধ্যায়ের পরিপূর্ণতায়, ততই সাধারণ কৃষক ও শ্রমিকবর্গের সঙ্গে নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাংলাদেশবাসীর চেতনা হবে অগ্নিপ্রখর এবং সকল প্রকার স্বৈরাচারের সঙ্গে পাঞ্জা কষার উপযুক্ত। ভারতীয় জনগণের সামনেও আসবে পরীক্ষাকাল।
বলতে কোনাে বাধা নেই, ভারতের বৃহৎ সংবাদপত্রগুলাে, জাতির যে উচ্চকোটি, বিত্তবান শ্রেণীর মনােভাব প্রতিফলিত করে চলেছে, তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষগুলাের সম্পর্কে সংবেদনশীল তাে নয়ই, এমনকি তাদের সম্পর্কে কোনাে খবরও রাখে না। মূলত পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষ এবং (সরকারি মহলে) পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভীতি ও অনিশ্চয়তার ভাব থেকে আজকের এই মেকী, বাংলাদেশ দরদের আতিশয্য। নতুন দিল্লী লখনৌ, জয়পুর তিনটি প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় রাজধানীর নাম করা হলাে কেবল প্রভৃতি শহরে যে সমস্ত সরকারি কংগ্রেসদল অধ্যুষিত জনসভা করা হয়েছে, কোথাও জনগণের স্বততাৎসারিত অভিব্যক্তি দেখা দেয়নি, দেখা মিলেছে শিক্ষিত এবং স্বচ্ছল মধ্যবিত্তের সাজানাে মঞ্চবিলাস। ব্যতিক্রম কানপুর এবং শিল্পাঞ্চলীয় শহর এলাকার শ্রমিকবৃন্দ। তাদের হৃদয়জাত অভিব্যক্তি প্রকৃতই বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কারণ তারা নিজেদের রুজিরােজগার সম্পৃক্ত দাস বেদনা থেকে শিখেছে, গরিবদের মুক্তি সংগ্রাম কতাে সুদূরপ্রসারী, কত সর্বদেশব্যাপী।
সূত্র: দর্পণ
২১.০৫.১৯৭১