সংবাদ
১৮ই ডিসেম্বর ১৯৬৮
বরিশালে আসগর খান:
দুই প্রদেশকে যতদূর সম্ভব স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে
বরিশাল, ১৭ই ডিসেম্বর (পিপিআই)।- পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল আসগর খান আজ এখানে টাউন হলে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন যে, বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ আগামী জানুয়ারীতে ঢাকায় এক বৈঠকে মিলিত হইয়া আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন।
এয়ার মার্শাল তাঁহার বক্তৃতায় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও রাজনীতিতে তাঁহার প্রবেশের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব লকিতুল্লাহ। বক্তৃতা করেন জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব হাসান এ, শেখ, জনাব ফজলে রব চৌধুরী, জনাব মাহমুদ আলী, অধ্যাপক গোলাম আজম, জনাব বি, ডি, হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট শামসুল হক ও এডভোকেট নূরুল ইসলাম।
এয়ার মার্শাল মন্ত্রীদের সুশোভিত ড্রইংরুম হইতে বাহির হইয়া জনগণকে মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। জনগণের মুখোমুখি হইলেই ক্ষমতাসীনরা দেশের পরিস্থিতি সম্যক উপলব্ধি করিতে পারিবেন।
এয়ার মার্শাল আসগর খান, ওয়ালী খান, ভুট্টো ও শেখ মুজিবর রহমানসহ আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবী করেন। এয়ার মার্শাল দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন যে, জাতীয় প্রশ্নে মতামত প্রকাশ বন্ধ করার জন্য সরকার শীর্ষস্থানীয় গণ-নেতৃবৃন্দকে কারান্তরালে রাখিয়াছেন। তিনি বলেন যে, জরুরী অবস্থার অজুহাতেই এইসব করা হইতেছে। কিন্তু বর্তমানে জরুরী অবস্থা বলবৎ রাখার কোন কারণ নাই। তিনি অবিলম্বে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান বলেন যে, এখন পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ জাগিয়া উঠিয়াছে— তাহারা পূর্ব পাকিস্তানী ভাইদের দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাহারা নেতৃত্ব দিলে পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণ খুশীই হইবে।
পশ্চিম পাকিস্তানে গণআন্দোলন
পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাপক গণআন্দোলনের বিষয় উল্লেখ করিয়া বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণ বর্তমান সরকারের উপর বিরক্ত হইয়া পড়িয়াছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করিয়াছেন এবং প্রচারযন্ত্রগুলিকে সরকারের উদ্দেশ্য চরিতার্থের কাজে ব্যবহার করিয়াছেন।
তিনি বলেন যে, দুই প্রদেশের জনগণ এখন নির্যাতিত। এই নির্যাতনই তাহাদের ঐক্যবদ্ধ করিয়াছে এবং উহারই ফলশ্রুতি স্বরূপ দেশজোড়া আন্দোলন শুরু হইয়াছে।
এয়ার মার্শাল ঘোষণা করেন যে, তিনি উভয় প্রদেশের সম্ভাব্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনই প্রদানের পক্ষপাতী। তিনি বলেন যে, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনই পাকিস্তানকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিপূর্ণ করিতে পারে।
সভায় পূর্বাহ্নে বক্তৃতাকালে জাতীয় পরিষদ সদস্য হাসান এ, শেখ বলেন যে, পাকিস্তান শুধুমাত্র কতিপয় লোকের জন্য সৃষ্টি হয় নাই। তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন যে, গত দশ বৎসরে গরীব আরও গরীব হইয়াছে।
হাসান এ, শেখ বলেন যে, বর্তমান মুহূর্তে ঐক্য ও জনগণকে সংগঠিত করাই প্রথম কাজ। এয়ার মার্শাল ও জনাব হাসান এ, শেখের বক্তৃতাকালে শ্রোতৃবৃন্দ বারবার হাততালি প্রদান করেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে ভাষণ
পূর্বাহ্নে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে জনাব আসগর খান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে কার্যকরী ভূমিকা পালনের জন্য তাঁহাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এয়ার মার্শাল বলেন যে, সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করিয়াছেন। সরকার ক্ষমতাসীন মহলের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সংবাদপত্র ব্যবহার করিতেছেন। তিনি বলেন যে, পত্রিকা, বেতার ও টেলিভিশনে শিক্ষিত বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মার্জিত স্বভাবের লোকেরা কাজ করেন, তা সত্ত্বেও সরকার তাহাদের নিজেদের স্বার্থে কাজ করিতে বাধ্য করেন। তিনি সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করেন।
এয়ার মার্শাল বলেন যে, বর্তমান সরকার জনগণের দৃঢ়তার মুখে তাসের ঘরের ন্যায় ধসিয়া পড়িবে-সেদিন বেশী দুরে নহে।
জনাব আসগর খান বলেন যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব দশ বছর দেশ শাসন করিয়াছেন; এখন তাঁহার অবসরগ্রহণ করা উচিত। তিনি তাহা না করিলে জনগণ তাঁহাকে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করিবে এবং তাহাদের ইচ্ছানুসারে সরকার প্রতিষ্ঠা করিবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮