You dont have javascript enabled! Please enable it! 1968.05.04 | লালদীঘি ময়দানে জনসভা: ৬ দফা দাবীর সমর্থকরা দেশপ্রেমিক | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
৪ঠা মে ১৯৬৮
লালদীঘি ময়দানে জনসভা: ৬ দফা দাবীর সমর্থকরা দেশপ্রেমিক
(আজাদের চট্টগ্রাম অফিস হইতে)

৩রা মে।—আজ অপরাহ্নে লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় ৬ দফা কর্মসূচী ও উহার প্রণেতা শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব জহুর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপরোক্ত জনসভায় শহর আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জনাব জয়নুল আবেদিন, প্রধান অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক জনাব আশরাফ খান ও দফতর সম্পাদক জনাব সদরিস আলম বক্তৃতা করেন। সভায় বক্তৃতাদানকালে জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী বলেন যে, একমাত্র ৬ দফা কর্মসূচীর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী সংযুক্ত ও সংহতিপূর্ণ দেশ হিসাবে গড়িয়া তোলা যাইতে পারে। তিনি বলেন, ৬-দফার বাস্তবায়ন কোনদিনই পাকিস্তানকে দুর্ব্বল ও বিচ্ছিন্ন করিবে না।
জনাব চৌধুরী আরো বলেন যে, ৬-দফা দাবীর সমর্থকরা দেশপ্রেমিক। তাহারা বিচ্ছিন্নতাবাদী নহে। তিনি ৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য জনগণকে গণআন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানান এবং কর্মীদের ৬-দফার স্বপক্ষে জনমত গঠনের জন্য গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়ার আহ্বান জানান।
জনাব চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন যে, আদর্শের জন্য অসংখ্য ত্যাগের বিনিময়ে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছিল, সেই আদর্শ আজ স্বপ্নই রহিয়া গিয়াছে। তিনি বলেন যে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও সুসংহত প্রচেষ্টার ফলেই একদিন পাকিস্তান অর্জ্জন সম্ভব হইয়াছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা লাভের বিশ বৎসর পরেও আজ সংহতির জন্য প্রচেষ্টা চালাইতে হয়।
তিনি অভিযোগ করেন যে, বঞ্চনা-হতাশা পূর্ব্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিচ্ছিন্নতার মনোভাব জাগাইয়া তুলিতেছে। ৬- দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে দুই প্রদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতা আনয়ন ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে আবার পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী অখণ্ড রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তোলা সম্ভব। অন্যথায় শুধুমাত্র অর্ডিনান্স জারি, পাকিস্তান কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা বা প্রতিনিধিদল বিনিময় করিয়া দুই প্রদেশের মধ্যে সংহতি স্থাপন সম্ভব হইবে না। সভায় গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাবে ৬-দফার প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন, ৬-দফার বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ ও সুদৃঢ় আন্দোলন চালানোর আহ্বান জানানো হয়।
সভায় গৃহীত বিভিন্ন শোক প্রস্তাবে শেখ রফিউদ্দিন সিদ্দীকি, জনাব আবুল খায়ের সিদ্দীকি, জনাব আবদুর রব মোল্লা, আবুল কালাম আজাদের ও মার্কিন নিগ্রো নেতা মার্টিন লুথার কিং এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
অপর এক প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮