You dont have javascript enabled! Please enable it! 1968.03.25 | ছাত্রলীগের প্রাদেশিক সম্মেলন সমাপ্ত: শিক্ষা-সংকোচন নীতি প্রত্যাহারের দাবী | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
২৫শে মার্চ ১৯৬৮
ছাত্রলীগের প্রাদেশিক সম্মেলন সমাপ্ত: শিক্ষা-সংকোচন নীতি
প্রত্যাহারের দাবী

(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
৬-দফা বাস্তবায়ন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা সংকোচন বন্ধকরণ এবং ছাত্রসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি আদায়ের বলিষ্ঠ সংগ্রাম অব্যাহত রাখার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়া গত শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের দুইদিনব্যাপী প্রাদেশিক সম্মেলন সমাপ্ত হইয়াছে।
সম্মেলনের সর্বশেষ অধিবেশনে ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। উক্ত অধিবেশনে ঘোষণাপত্রে ৬ দফাকে অন্তর্ভূক্ত করা এবং গঠনতন্ত্রে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদ বিলুপ্ত করিয়া তদস্থলে সাহিত্য সম্পাদক, পাঠচক্র সম্পাদক, প্রমোদ সম্পাদক ও সমাজসেবা সম্পাদক প্রভৃতি চারিটি নূতন পদ সৃষ্টি করা হয়। ইহা ছাড়া অধিবেশনে টাঙ্গাইল মহকুমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা ঘোষণা করা হয়।
উক্ত অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবে ৬-দফা সমর্থন ও উহার বাস্তবায়ন, ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, আল মুজাহিদী, নুরে আলম সিদ্দিকী, এম, এ, রেজা, ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভানেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, জনাব রাশেদ খান মেনন ও আলী হায়দর খান প্রমুখ সহ সকল ছাত্রবন্দী এবং জনাব তাজউদ্দিন, জনাব মোশতাক আহমদ সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী জানানো হয়।
ইহাছাড়া অপর এক প্রস্তাবে শেখ মুজিবের প্রাপ্য বিচার, প্রেসনোটের আকারে তাহার সংস্থান স্থলে ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত খবর জনসাধারণ্যে প্রকাশ করার দাবী জানানো হয়।
ছাত্রলীগ সম্মেলনে গৃহীত অন্যান্য প্রস্তাবে ছিল সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা ও ইত্তেফাক পুনঃচালু- খাদ্য ও নিত্য ব্যবহৃত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ, ন্যায্যমূল্যে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, শ্রমিক নির্যাতনের নিন্দা ও তাহাদের ন্যায্য দাবী দাওয়া পূরণ, পশ্চিম পাকিস্তানে সাবেক প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসন প্রদান।
রূপপুর আণবিক প্রকল্প বাস্তবায়ন, শিক্ষা সংকোচন নীতি প্রত্যাহার, হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট বাতিল, তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার সুবন্দোবস্ত ও জগন্নাথ কলেজ খুলিয়া তথায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি, আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েম, জোট বর্হিভূত স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর সরকারী হামলার নিন্দা, বেতার ও টেলিভিশনে অধিক সংখ্যক রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার, ভিয়েতনামে মার্কিনী হামলা ও কম্যুনিষ্ট অনুপ্রবেশের তীব্র নিন্দা, ভিয়েতনামীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সমর্থন, ইসরাইলী হামলার তীব্র নিন্দা, দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী নেতৃবর্গের ফাঁসিদানের প্রতিবাদ ও জাতিসংঘ কর্তৃক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ, টেক্সট বুক বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণ প্রভৃতি দাবীর প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
ইহার পর সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত কার্যকরী পরিষদ গঠন করা হয়:
সভাপতি- আবদুর রউফ, সহ সভাপতি- মাহবুবুল হুদা ভূঁইয়া, আবদুল বারি, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আবু খালিদ মোহাম্মদ ইসহাক, তাহেরুন ইসলাম খান, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, এ, কে, ফিরোজ নুন। সাধারণ সম্পাদক- খালেদ মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- ফজলুর রহমান ফারুক, শাহজাহান সিরাজ, স্বপন কুমার চৌধুরী, সাইদা গফফার, এ, কে, এম, মোজাম্মেল হক ও এস, এম, মনিরুজ্জামান। সাংগঠনিক সম্পাদক- শেখ শহীদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক- তাসির উদ্দিন আহামেদ, দফতর সম্পাদক- আঃ সঃ মঃ আবদূর রব, প্রমোদ সম্পাদক- আপেল মাহমুদ, পাঠচক্র সম্পাদক- সাহাবুদ্দিন খালেদ, সাহিত্য সম্পাদক- নাসিরুল ইসলাম বাচ্চু, সমাজসেবা সম্পাদক- মুফিজুর রহমান বাবলু, ক্রীড়া সম্পাদক – মোঃ মহিউদ্দিন আহমদ ও কোষাধ্যক্ষ- মহিউদ্দিন আহমেদ। ইহাছাড়া ১৩ জন সদস্য ও প্রতি জেলা হইতে একজন করিয়া সদস্য গ্রহণ করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮