সংবাদ
১২ই মার্চ ১৯৬৮
সিলেটের জনসভায় গভর্ণর মোনায়েম বলেন
বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ বুনিয়াদী নির্বাচন প্রথা নস্যাৎ করিতে চান
সিলেট, ১১ই মার্চ (এপিপি)।- পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর জনাব আবদুল মোনায়েম খান গত শুক্রবার এখানে বুনিয়াদী গণতন্ত্রী ও অন্যান্য শ্রেণীর লোকদের এক সভায় বক্তৃতাকালে বিরোধী দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্য বর্ণনা করিয়া বলেন যে, তাঁহারা বুনিয়াদী গণতন্ত্র প্রথা নস্যাৎ করিয়া দিতে চাইতেছেন। তিনি বিভিন্ন দলিলপত্র এবং রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়া দেখাইয়া দেন যে, মরহুম খাজা নাজিমুদ্দীন হইতে শেখ মুজিবর রহমান পর্যন্ত সকল নেতাই এই প্রথার নিন্দা করিয়াছেন এবং সুযোগ পাইলেই এই ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করার আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন।
গভর্ণর বিরোধী দলীয় নেতাদের কঠোর সমালোচনা করিয়া বলেন যে, এই সব ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকাকালে নিজেদের স্বার্থে জনগণের স্বার্থের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়াছেন। তিনি বলেন, এই ধিকৃত রাজনীতিকরা পুনরায় জনগণকে বিভ্রান্ত করিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মানসে মুখরোচক শ্লোগান তুলিয়াছেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জনসাধারণ তাঁহাদের এই বাসনা চরিতার্থ হইতে দিবে না।
চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে একজন মর্যাদাসম্পন্ন কেরানী বৈ কিছুই নয় বলিয়া বর্ণনা করিয়া গভর্ণর তাঁহার ক্ষমতা লাভের কাহিনী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বড়ই লজ্জার ব্যাপার যে, যে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী আন্তঃআঞ্চলিক বৈষম্যের সৃষ্টিকর্তা, সেই চৌধুরী মোহাম্মদ আলীই আজ পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের ধ্বজাধারী বলিয়া নিজেকে জাহির করিতেছেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করিয়া বলেন যে, তাঁহাদের আমলেই বৈষম্যের বীজ রোপন করা হইয়াছে এবং ক্রমেই উহা ব্যাপকরূপ ধারণ করিয়াছে। তাঁহাদের অবহেলার জন্যই কেন্দ্রের ৪৫ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা খরচ না হইয়া কেন্দ্রের নিকট ফেরৎ যায়। যদি ঐ টাকা খরচ করা হইত তাহা হইলে প্রদেশের অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়িত হইত।
বুনিয়াদী গণতন্ত্র প্রথার প্রশংসা করিয়া গভর্ণর আগে জেলা বোর্ড ও বর্তমানের জেলা কাউন্সিলের এক তুলনামূলক চিত্র তুলিয়া ধরেন। তিনি বলেন যে, আগে সিলেট জেলা বোর্ডের বার্ষিক বাজেটে ৭ হইতে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় ধাৰ্য্য হইত। অথচ বর্তমান সিলেট জেলা কাউন্সিলে ১ কোটিরও বেশী টাকা বৎসরে খরচ করা হয়।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ খণ্ড: ষাটের দশক ॥ তৃতীয় পৰ্ব ॥ ১৯৬৮