সোভিয়েত শান্তি কমিটির বিবৃতি
পাকিস্তানের বিখ্যাত প্রগতিশীল ও আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা সম্পর্কে সোভিয়েত শান্তি-সংগ্রামীরা গুরুতর উদ্বেগ পোষণ করেন। এই আওয়ামী লীগই সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এই নির্বাচনের অনতিকাল পরেই, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির ব্যাপারে মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এখন তিনি সামরিক আদালতের রুদ্ধদ্বার কক্ষের অধিবেশনে বিচারাধীন।
মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্যায় ও নিষ্ঠুর ব্যবস্থায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাদের ওপর নির্যাতনে সোভিয়েত জনগণ ক্ষুব্ধ। পৃথিবীর সংবাদপত্রের খবরে জানা যায়, মুজিবুর রহমানের সামনে এখন মৃত্যুদণ্ডের বিপদ উপস্থিত। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাজকর্মকে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের আইনসঙ্গত মানবিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানি জনগণের সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত ইচ্ছাকে অস্বীকার করা বলেই গণ্য করা যায়।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা ও জননেতাদের নির্যাতন এবং জনসাধারণের ওপর নিপীড়নের ফলে লক্ষ লক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষ নিজেদের দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থীদের বিরাট স্রোত পাকিস্তানের পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটাচ্ছে; আর এই শরণার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনাহার আর মহামারীর প্রকোপ।
সোভিয়েত শান্তি কমিটি ঘোষণা করছেন যে, এশিয়ার শান্তিরক্ষার স্বার্থে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভূত সমস্যাবলির রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত জনগণের পক্ষ থেকে আমরা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, তাঁরা যেন মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য জননেতার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ব্যবস্থা বন্ধ করেন এবং এমন ব্যবস্থা পালন করেন, যা এই অঞ্চলে শান্তিকে শক্তিশালী করবে।
সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা