You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.11 | ‘অ্যান্ডারসন দলিল' নতুন নতুন প্রশ্ন হাজির করেছে - সংগ্রামের নোটবুক

‘অ্যান্ডারসন দলিল’
নতুন নতুন প্রশ্ন হাজির করেছে
গেনরিখ বোরোভিক, এপিএন সংবাদদাতা

অতি সম্প্রতি মার্কিন চলচ্চিত্রে ‘জ্যাক অ্যান্ডারসনের ম্যাগনেটিক টেপ রেকর্ড’ শিরোনামে একটি নতুন রুদ্ধশ্বাস চিত্র দেখানো হয়েছে। কী করে একটি গুপ্ত টেপ রেকর্ড অপরাধ উদঘাটনে সাহায্য করল, তাই হচ্ছে এর কাহিনী। বদ্ধ দরজার অন্তরালে যা ঘটেছে, তারই সত্য কাহিনী বর্ণনা করেছে চৌম্বক যন্ত্রটি।
‘অ্যান্ডারসন দলিল’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে একটি গোয়েন্দা গল্পের সাদৃশ্য—শুধু নামের মিলের দিক থেকেই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ‘শ্রেণিবদ্ধ’ কার্যকলাপের সঙ্গে তাদের মুখপাত্রদের সরকারি ঘোষণার অ-মিলের দিক থেকেও।
অ্যান্ডারসনের উদঘাটনের ফলে মার্কিনীরা যেসব নৈরাজ্যব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত নেয়, তার কয়েকটি এখন তালিকাবদ্ধ করা যেতে পারে :
ডেমোক্র্যাটদের মতো না করে এই প্রশাসন ‘প্রকাশ্য কর্মনীতি’ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তা কংগ্রেস ও নির্বাচকদের প্রবঞ্চনা করেছে। প্রশাসন সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে, কেননা ‘অ্যান্ডারসন দলিল’ থেকে দেখা যায় যে, পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা গোপন চুক্তি রয়েছে, যা সংবিধান অনুসারে কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত। কিন্তু যা বেরিয়েছে, তাতে দেখা যায় যে, ক্যাপিটাল হিলে কারোরই এই ধরনের একটি চুক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা ছিল না।
মার্কিন কর্মকর্তাগণ ভারতকে ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্র’ (অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) হিসেবে বারংবার অভিহিত করা সত্ত্বেও ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ত্রয়ীর আলিঙ্গনে’ যোগ দিয়ে ‘গণতন্ত্রের’ পৃষ্ঠপোষকতা করলো না, করলো ইয়াহিয়া খাঁ’র একনায়ক রাজকে। এই ‘ত্রয়ীর আলিঙ্গন’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও চীনের রাজনীতিকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছিল (এই আলিঙ্গন এত দৃঢ় যে, চীনা নেতৃবৃন্দ ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ওপর মার্কিনী বিমান আক্রমণকে অনেকদিন নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে)।
এই দুঃখজনক সিদ্ধান্তগুলোর তালিকা দীর্ঘ করা যেতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকগণ এখন শুধুমাত্র ‘গোয়েন্দা’ বিষয়ক প্রশ্ন নিয়ে ব্যাপৃত: জ্যাক অ্যান্ডারসনকে কে হোয়াইট হাউসের শ্রেণিবদ্ধ (Classified) ফাইল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? এর পেছনে উদ্দেশ্যগুলো কী? পেন্টাগনের গোপন কাগজপত্রের অবস্থা কিছুটা সহজতর—পেন্টাগনের কর্মকর্তা দানিয়েল এলসবার্গের গোপন কাগজপত্র নাড়াচাড়া করার অধিকার ছিল, যুদ্ধ সম্পর্কে মনোভাব বদলানোতে তিনি সেগুলো ফাঁস করে দিয়েছেন। তাছাড়া পেন্টাগনের দলিলপত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল পূর্ববর্তী প্রশাসনের, অপরপক্ষে ‘অ্যান্ডারসন দলিল’ উদ্ঘাটিত করেছে বর্তমান প্রশাসনের ক্রিয়াকলাপ। একমাত্র বর্তমান প্রশাসনের কর্মকর্তারাই এগুলো অ্যান্ডারসনকে দিতে পারে, অ্যান্ডারসন নিজেও এটা সমর্থন করেছেন।
যখন অনুসন্ধান চলছে, তখন সাংবাদিকরা দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্ত—এর পেছনে উদ্দেশ্যগুলো কী? অনেকগুলো অনুমান করা হচ্ছে: এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুসৃত নীতি পরিবর্তনের জন্য এই কর্মনীতির নীতিনিষ্ঠ বিরোধীরা এটা করেছে। এটা করা হয়েছে এই আশঙ্কা থেকে যে, প্রশাসনের বিপজ্জনক এশীয় কর্মনীতি ব্যাপক আকারে গুরুতর সামরিক সংঘর্ষ বাধিয়ে দিতে পারে। এটা করেছে বিভিন্ন দপ্তরের কিসিঞ্জারের শত্রুরা, যে দপ্তরগুলোকে প্রেসিডেন্টের বিশেষ উপদেষ্টা দাবিয়ে রেখেছে।
সে যাই হোক, গোপন কাগজপত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং তা প্রমাণ করছে যে, এশিয়া সম্পর্কিত মার্কিন নীতির প্রশ্নে প্রশাসন গভীরভাবে দ্বিধা-বিভক্ত।
এপিএন, ১১ জানুয়ারি ১৯৭২

সূত্র: বাংলাদেশের সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা