পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সদস্য ১০ লক্ষ হওয়া উচিৎ – শেরপুরে শেখ মুজিব
২৮.৫.১৯৪৮ তারিখের গোপন নথিতে জানা যায়, শেরপুর শহরে প্রগতিশীল মুসলিম লীগের আয়োজনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী ও অন্যান্য নেতারা বক্তৃতা দিয়েছেন। মাওলানা ভাসানী জমিদারি ব্যবস্থার বিলুপ্তি দাবি করেন। তিনি মন্ত্রিপরিষদ ও সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসারের সমালোচনা করেন, মুসলিম লীগ পুনর্গঠন এবং হিন্দুদেরকে পাকিস্তান ছেড়ে না যাওয়ার অনুরোধ করেন।
১. সভার স্থানঃ জে,কে স্কুল প্রাঙ্গন, শেরপুর শহর।
২. সময় ও তারিখঃ ২৮.০৫.৪৮, — ১৫.০০ হতে ১৯.৩০ পর্যন্ত।
৩. সভাপতিঃ জনাব আলতাফউদ্দিন বি,এল উকিল, শেরপুর আদালত।
৪. বক্তাঃ—
ক. শেখ মুজিবুর রহমান, ছাত্রনেতা, ঢাকা।
খ. মাওলানা আব্দুল হামিদ খান, সংসদ সদস্য, পূর্ব বাংলা।
গ. জহিরউদ্দিন আহমেদ (তথাকথিত সালারে-সুবা, পূর্ব বাংলা।
ঘ. খন্দকার আব্দুল হামিদ, উপ-সম্পাদক, “ইত্তেহাদ”, পিতা- খন্দকার আব্দুল লতিফ, কসবা, শেরপুর শহর।
ঙ. জনাব ফখরুদ্দীন আহমেদ, বি,এল। পিতা- মৃত আলী নেওয়াজ, নেওরা, ইশ্বরগঞ্জ এবং গুলকিবাড়ী রোড, ময়মনসিংহ।
চ. জনাব শামসুল হক, পিতা- দবিরউদ্দিন, মাইঠান, নাগরপুর, ময়মনসিংহ।
৫. আয়োজকঃ খন্দকার আব্দুল হামিদ এবং অন্যান্য।
৬. উপস্থিতিঃ হিন্দু এবং মুসলমান মিলে ৬০০ জন।
প্রগতিশীল মুসলিম লীগ এর উদ্যোগে সিপিআইয়ের অনুকরণে সভাটি আয়োজিত হয় এবং পাকিস্তানে মুসলিম লীগের পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান এমপি বলেন, পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য সম্পন্ন হয়েছে। এখন পাকিস্তানে মুসলিম লীগের ভবিষ্যতের আকৃতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। মুসলিম লীগকে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বার্থে এখন একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংগঠনে রূপান্তর করা জরুরি প্রয়োজন।
মুসলিম লীগের সদস্য পাকিস্তানের মুসলিমদের স্বার্থে সর্বোচ্চ ১০ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে হবে এবং কিছু সংখ্যক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি যেমন নওয়াব, নাইটস, খান বাহাদু দের স্বার্থে নয়। তিনি তীব্র সমালোচনা করেন সেসব শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের যারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নয়। তিনি জমিদারি ব্যবস্থার বিলুপ্তি সম্পর্কে জোর দিয়েছিলেন, যা পূর্বের অধিবেশনে মাননীয় মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী সাহেবের হাতে তালিকাভুক্ত ছিল।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানের কিছু নেতার সমালোচনা করেন যারা ধর্ম “ইসলাম” কে ব্যবহার করেন নিজেদের স্বার্থের জন্য। তিনি বলেছেন, ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য ছিলো না এবং পাকিস্তানে সব সমান। তিনি হিন্দুদের অনুরোধ করেছেন যাতে তারা নিজেদের ভিটেমাটি ও বাড়ি ছেড়ে না যায়, তাদের স্বার্থ এবং জীবন পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিমদের রক্ষা করা উচিৎ। সভাপতি এবং সকল বক্তা পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের পুনর্গঠন ও জমিদারী প্রথা বিলুপ্তি সম্পর্কে কথা বলেছেন।
যে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছেঃ
১. পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সদস্য ১০ লক্ষ হওয়া উচিৎ।
২. ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি।
৩. বিনা বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
৪. শেরপুর-জামালপুর ডি.বি রোড পুনর্গঠন।
৫. সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য প্রদেয় অর্থ কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০০০/- রুপি করা।
৬. পূর্ব বাংলায় কমিশনার পদের বিলুপ্তি। [1, pp. 20–22]
নোট
শামসুল হক- শামসুল হক ছিলেন আওয়ামী সর্ব প্রথম সাধারণ সম্পাদক, তিনি ১৯৫০ এবং ১৯৬০ বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি একজন বাঙালী রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি ১৯৫০ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য পাকিস্তান সরকারের সংসদীয় কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল এবং ফলশ্রুতিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন।শামসুল হক ১৯৬৫ সালের কোন এক সময়ে টাঙ্গাইল জেলায় মৃত্যুবরণ করেন।
হামিদুল হক চৌধুরী(১৯০১-১৯৯২)ঃ হামিদুল হক চৌধুরী ১৯৩৭ সালে আইন পরিষদ (কাউন্সিলের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট) এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৪৬ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন, হামিদুল হক ১৯৪৭ সালে স্যার সাইরিল রেডক্লিফের সীমা কমিশনের সামনে মুসলিম লীগ প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৪৭ সালে বিভাজনের পর হামিদুল হক তার পরিবার নিয়ে ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) চলে আসেন। তিনি পাকিস্তানের সাংবিধানিক নির্বাচিত হন এবং পূর্ব বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন।
References:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol I 1948-1950. Hakkany Publisher’s, 2018.