বাঁচাও পূর্ব পাকিস্তান কমিটি
মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন এলাকায় বাঙালিদের সাহায্যের জন্য যে কত কমিটি, সভা-সমাবেশ হয়েছিল এখনও তার ধারাবাহিক কোনো ইতিহাস লেখা হয়নি। সূত্রগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে বা গেছে।
এমনি একটি সংস্থা ছিল সেভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটি। ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকার অন্তর্গত ছিল এই সমাবেশ। তাঁরা যে আবেদন করেছিলেন এর শিরোনাম ছিল—Massacre – Genocide Bloodbath-Terror And Now Starvation All part of a Game’ The tragedy of East Pakistan (Bangladesh).
মার্কিন নাগরিকদের কাছে আবেদন জানিয়ে কমিটি বলেছিল— যুদ্ধ, বন্যা, সাইক্লোন-ও বর্তমানে খাদ্য ঘাটতির ফলে ১০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ইস্ট পাকিস্তানি অনাহারের সম্মুখীন হবে। পাকিস্তানিরা যাই বলুক না কেন অবস্থা খুবই শোচনীয়। এ জন্য দরকার বড় আকারের আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টা। না হলে বড় ধরনের ট্রাজেডি এড়ানো যাবে না। কমিটি আরো জানিয়েছিল ক্ষুধার্ত মানুষের ছবি ছাপা হওয়ার পর ত্রাণ শুরু হলে হাজার হাজার মানুষ রক্ষা করা দুষ্কর হয়ে উঠবে। “International action, immediate and strong’ is perhaps the only defence the people of East Bengal now have.”
নভেম্বরে [১৯৭০] প্রকৃতি নির্বাপিত করেছিল অসংখ্য প্রাণ। মার্চে [১৯৭১] বাংলাদেশে আঘাত হানলো আরেকটি দুর্যোগ-সুপরিকল্পিতভাবে নিধন করা হতে লাগলো এর তরুণদের, বুদ্ধিজীবীদের ও লাখো লাখো নিরপরাধ মানুষকে। এবারে দায়ী ইয়াহিয়া খান।
সেভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটি ১২ জুন এক মিছিলের আয়োজন করে। অপরাহ্নে পাকিস্তানি দূতাবাস অভিমুখে যাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান তারপর জাতিসংঘ প্লাজায়— সেখানে হবে সমাবেশ। বক্তা কংগ্রেস সদস্য ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ। জুনের ১০ তারিখ ‘বাংলাদেশ আপনার সাহায্য চায় সমাবেশ নামে একটি সভা আহ্বান করে এক গির্জায়। সেখানে বক্তা হিসেবে ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল Moral and Human Aspects of Struggle in Bangladesh.
এরপর তাঁরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন নিজ নিজ এলাকার সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যকে যেন লেখেন বাংলাদেশকে সহায়তা করতে। যতদিন বাংলাদেশের ক্ষুধার্ত ও ভয়ার্ত মানুষ ত্রাণ ও মুক্তি না পাবে ততদিন যেন পাকিস্তানকে সহায়তা করা না হয়।
সূত্র: স্বাধীনতার দলিলপত্র: খন্ড ১৩
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন