You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.20 | পল কনেট, অ্যালেন কনেট এবং ম্যারিয়েটা প্রকোপের উদ্যোগে অ্যাকশন বাংলাদেশ গঠন - সংগ্রামের নোটবুক

অ্যাকশন বাংলাদেশ

গণহত্যা শুরু হয়ে গেছে। পাশ্চাত্যে ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকায়ই বাংলাদেশ সম্পর্কিত খবরাখবর বেরুচ্ছিল। পল কনেট তখন তরুণ শিক্ষক। স্ত্রী অ্যালেন কনেট। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন পিএইচ ডি কোর্স করছেন ম্যারিয়েটা প্রকোপে। তাঁরা ঠিক করলেন বাংলাদেশের জন্য কিছু করা দরকার। উদ্যোগ নিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করলেন অ্যাকশন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পিস নিউজ, ইন্টারন্যাশনাল কনসাস ইন অ্যাকশন, পিস প্লেজ ইউনিয়ন, থার্ড ওয়ার্ল্ড রিভিউ, ইয়ং লিবারেলস, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি, বাংলাদেশ নিউজলেটার, ফ্রেন্ডস পিস কমিটির প্রতিনিধি ও কিছু ব্যক্তির এক সভায় অ্যাকশন বাংলাদেশ গঠিত হয়। লন্ডনের ক্যামডেনে ৩৪ স্ট্র্যাটফোর্ড ভিলাস-এ ছিল ম্যারিয়েটার বাসা। সেটিই হয়ে উঠল ‘অ্যাকশন বাংলাদেশের অফিস।
বিচারপতি শাসুদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, এরা তিনজন বিশেষ করে ম্যারিয়েটা যেভাবে বাংলাদেশের জন্য দিনরাত কাজ করেছেন এক কথায় তা বলা যায় অসম্ভব। কনেট দম্পতি এমনভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছিলেন যেন তাঁরা নিজ দেশের মুক্তির জন্য কাজ করছেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এ দম্পতি তাঁদের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন মুজিব। অ্যাকশন বাংলাদেশের অধীনে তাঁরা আরো দু’টি সংস্থা গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার ও শরণার্থীদের সাহায্য দানের জন্য গঠন করা হয় ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং হাউস’। কয়েকজন বাঙালিও ছিলেন এর সদস্য। শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য গঠিত হয় ‘অপারেশন ওমেগা’।
জুলাই মাসে তাঁরা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এপ্রিল থেকে তাঁরা কী করেছিলেন।

২৮ এপ্রিল
পাকিস্তান ক্রিকেট দল এসেছিল। যেখানে তাঁরা ছিল সেখানে প্রতিবাদ মিছিলের যৌথ উদ্যোক্তা। শ্লোগান ছিল—Don’t start play-stop the war!

১৩ মে
দি টাইমসে ৩/৪ পৃষ্ঠা জুড়ে বিজ্ঞাপন। ১৪ মে পার্লামেন্টে বিতর্কের আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ২০৬ জন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞাপন যার টাকা এই ২০৬ জনই যুগিয়েছেন। এর শিরোনাম ছিল ‘This is the moment to show that man is more than an ‘internal problem’.
টেমসের তীরে অ্যালবার্ট এমবাংকমেন্টে রাতে বার্মিংহাম রিলিফ অ্যান্ড একশন কমিটির সঙ্গে মোমবাতির আলোয় সমাবেশ। হাউস অব কমন্সের উল্টোদিকে তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড যাতে লেখা ছিল MP’s show you care!

২৫শে মে
Break the Blocade situation-এ শিরোনামে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু যাতে শরণার্থীদের হাতে খাদ্য-ঔষধ পৌঁছানো যায়।

৩ জুন
কেনসিংটনে ডি ভিরি হোটেলে জয়প্রকাশ নারায়ণকে সম্বর্ধনা যাতে ব্রিটিশ সরকারের কার্যক্রম বাংলাদেশের পক্ষে জোরদার হয়।

৭ জুন
ওয়ার রেজিস্টারস ইন্টারন্যাশনাল, কমিউনিটি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন গ্রুপ, ম্যানচেস্টার ও পিস নিউজের সঙ্গে যৌথভাবে অপারেশন ওমেগা-র কার্যক্রম শুরু। এর উদ্দেশ্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে শরণার্থীদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো।

১০ জুন
লন্ডনে বাঙালি বা ‘বাংলাদেশ সম্প্রদায়-এর সংস্থা বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটি, বাংলাদেশ উইম্যানস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ যুব সংঘ, অ্যাকশন কমিটি স্ট্রেথহ্যাম, অ্যাকশন কমিটি ফর বাংলাদেশ (উত্তর ও উত্তর পশ্চিম লন্ডন), বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড অ্যান্ড স্টিয়ারিং কমিটি-কে সাথে নিয়ে ‘পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ কর’ প্রচারের শুরু।

১৪-১৮ জুন
পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ কর বা ‘Stop Aid to Pakistan Campaign’ এর উদ্যোগে ৫ দিনে পাকিস্তান এইড কনসোর্টিয়ামের দলটি দেশের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের মূল প্রতিপাদ্য ছিল— ‘Financial Aid for Pakistan means Genocide for the people of Bangladesh.’ Soft দেশের সরকার প্রধানের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি প্রদান।

১৫ জুন
পাকিস্তানকে বৈদেশিক সাহায্য না দেওয়ার জন্য লবির উদ্দেশ্যে দুইজন প্রতিনিধি প্রেরণ।

১৮ জুন
নিউ স্টেটসম্যান-এ ১৪ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন।

১৯ জুন
‘স্টপ এইড পাকিস্তান’ প্রচারের পক্ষ থেকে আরো ছয়জন প্রতিনিধি প্রেরণ প্যারিসে। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন বাংলাদেশ ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী।

২১ জুন
প্যারিসে সকাল ১১টায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দফতরের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন। এখানে পাকিস্তানকে সাহায্য দেওয়া হবে কি হবে না তা নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। লন্ডন ও বার্মিংহাম থেকে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন এসেছিলেন বিক্ষোভে যোগ দিতে।
বিকেল চারটায় বাংলাদেশের ৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিয়ে সংবাদ-সম্মেলন।

২৫ জুন
দি ট্রিবিউনে বাংলাদেশের পক্ষে বিজ্ঞাপন প্রকাশ।

৩০ জুন
দি টাইমস-এ পূর্ণ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন। শিরোনাম Genocide in East Bengal and Recognition of Bangladesh। এ বিজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছিলেন ২১০ জন এম.পি. ১১ জন প্রিভি কাউন্সিলর ও ৩০ জনের ওপর প্রাক্তন মন্ত্রী।

১ জুলাই
ট্রাফলগার স্কোয়ারে সমাবেশ।
বক্তৃতায় পল কনেট বলেন—
“বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের পক্ষে রয়েছে বিশ্বের সকল দেশের, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মুক্তিকামী মানুষ। এই যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ স্বাধীনতা হরণকারীদের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের যুদ্ধ। আপনাদের এই আদর্শের সংগ্রামের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করছি।”
সমাবেশ শেষে ওমেগা-১ ভ্যানে করে অ্যালেন ও একজন মহিলা পাকিস্তানি হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ভ্যান যোগে রওয়ানা হন বাংলাদেশের দিকে।

১৫ আগস্ট
ট্রাফলগার স্কোয়ারের স্কোয়ারের পাকিস্তান সলিডারিটি ফ্রন্ট-বাংলাদেশ বিরোধী এক সভা করে। তার প্রতিবাদে অ্যাকশন বাংলাদেশ বিকেলে মার্কিন দূতাবাসের সামনে গণহত্যার অভিনয় করে। তিনজন শাড়ি পরিহিতা মহিলা রাস্তায় শোওয়া। আর পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। অ্যাকশন বাংলাদেশ এছাড়াও গণহত্যা নিয়ে পুস্তিকা, বুলেটিন, লিফলেট প্রকাশ করে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে তাদের অবদান অনেক।

সূত্র: দলিলপত্র: খণ্ড ১৩
বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও পল কনেটের সঙ্গে আলাপচারিতা।
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন