‘গোটা পূর্ববঙ্গই মাইলাই’
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের শ্রমিক দলীয় সদস্য ব্রুস ডগলাসম্যান এপ্রিলের শেষের দিকে কলকাতা আসেন। ২৪ এপ্রিল সকালে তিনি কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, “ভিয়েতনামে মার্কিন ফৌজ সাধারণ মানুষের ওপর যে অত্যাচার চালিয়েছে, ইয়াহিয়া শাহীর বর্বরতা তাকেও হার মানিয়েছে। ভিয়েতনামে মাইলাই একটি ব্যতিক্রম, আর গোটা পূর্ববঙ্গই এখন মাইলাই।” ম্যান জানান, যথেষ্ট হত্যা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না।
ম্যান শরণার্থী শিবিরে একটি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেন যাঁরা সকলেই যশোর থেকে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে, “পাঞ্জাবি মিলিটারি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মানুষ খতম করা হচ্ছে। গ্রামকে গ্রাম লোক নেই, জন নেই, মাঠে শস্য নেই, থাকলেও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
ডগলাস ম্যান আরো বলেন, “বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি বাঙালিদের পক্ষে নৈরাশ্যজনক নয়। আবার ভারতীয় সংবাদপত্রে যেমন দেখান হচ্ছে, তেমন আশাব্যঞ্জকও নয়। অতিরিক্ত আশাবাদী চিত্র এঁকে ভারতীয় সংবাদপত্র মুক্তিকামী বাঙালিদের ক্ষতি করবেন।”
ইতোমধ্যে ২২০ জন পার্লামেন্টের সদস্য পূর্ববঙ্গে বর্বরতা থামানোর বিষয় আলোচনার জন্য নোটিশ দিয়েছেন যার প্রথম স্বাক্ষরকারী তিনি। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনে বাংলাদেশের জন্য যে সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হয়েছে ডগলাস ম্যান তার চেয়ারম্যান।
বায়াফ্রার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, “বায়াফ্রাতে পূর্ববঙ্গের মতো একটা নির্বাচন হয়নি। তাছাড়া ফেডারেল সরকারের সঙ্গে বায়াফ্রা এমন ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্নও ছিল না।” তিনি মনে করেন, যা ঘটছে তা আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।
সূত্র: আনন্দবাজার, কলকাতা, ২৫.৫.১৯৭১
একাত্তরের বন্ধু যাঁরা- মুনতাসীর মামুন