You dont have javascript enabled! Please enable it! শেখ মুজিব রোড: ফায়ারব্রিগেড অফিস অপারেশন, চট্টগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

শেখ মুজিব রোড: ফায়ারব্রিগেড অফিস অপারেশন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম দেওয়ানহাট ও চৌমুহনীর মধ্যবর্তীস্থানে এম, এ জিন্নাহ রোডের পূর্বপার্শ্বে (বর্তমানে শেখ মুজিব রোড) ফায়ারব্রিগেড ও সিভিলডিফেন্স-এর অফিস-এর অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোনো ধরনের গেরিলা তৎপরতার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দ্রুত আগুন নির্বাপন এবং উদ্ধার তৎপরতা এখান থেকেই পরিচালিত হতো। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের প্রথমে সারা শহর জুড়ে গেরিলাতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আগ্রাবাদস্থ এই ফায়ারব্রিগেডের তৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। ফায়ারব্রিগেডের অধিকাংশ কর্মচারী ছিল বাঙালি। তারা সংসার চালানোর জন্য চাকুরি করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের সমর্থন ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ফায়ারব্রিগেডে হুমকি প্রদান করা হলেও এর তৎপরতা বন্ধ হয়নি। কেসি-২ এর দলনেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুন এর বর্ণনা মতে বাঙালি কর্মচারীদের অনেকেই পরামর্শ দেয় যে ফায়ারব্রিগেড ধ্বংস করে দিলেই এর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মুক্তিযোদ্ধাগণ এখানে বিস্ফোরক স্থাপন করে তা ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়াও প্রশাসনকে অচল করে দেয়ার লক্ষ্যেও এই অপারেশন পরিচালনা করা হয়। কেসি-১, কেসি-২ ও কেসি-৩ যৌথভাবে এই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্বে বর্ণিত হাজী মোঃ আলীর পেট্রোল পাম্প অপারেশনের অভিজ্ঞতার অলোকে মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃদ্ধ পাকবাহিনীকে ফায়ারব্রিগেড বিস্ফোরণের পর অ্যাম্বুশ করারও পরিকল্পনা করেন। ঈদগাতে অবস্থিত হাজী মোঃ আলীর পেট্রোল পাম্পে অপারেশন করার সময় পাকসেনারা দেওয়ানহাটের দিক থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার ফলে পুরো অপারেশন ভেস্তে গিয়েছিল। কমান্ডারগণ ধারণা করেছিলেন ফায়ার ব্রিগেডের বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পাকবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে আসবে এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ তাদের ওপর আক্রমণ করবেন। রাত একটার মধ্যেই সবগুলো দল পানওয়ালাপাড়ায় এসে মিলিত হয়। শুধু নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ পুরো পরিকল্পনা জানতেন। বাকি সদস্যগণ কেবল যে কোনোস্থানে যে কোনো সময় দলনেতার নির্দেশে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সবাই মিলিত হবার পর দলনেতাগণ পুনরায় দায়িত্ব বুঝে নেন। এরপর পায়ে হেঁটে কাঁচা রাস্তা দিয়ে পুরো দল অপারেশনস্থলে এসে যার যার অবস্থান গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ৩য় দল থেকে কেসি-২ এর দলনেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুন, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ও এনামুল হক দানু ফায়ারব্রিগেডে বিস্ফোরক স্থাপন করেন। এর আগে অস্ত্রের মুখে সেখানকার কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরীদের পূর্বদিকে একটি মাঠে হাঁটুগেড়ে বসিয়ে রাখা হয়। বিস্ফোরক স্থাপন শেষে ফিউজে আগুন দিয়ে তৃতীয় দল ফেরত আসেন। পরপরই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে দুই তলাবিশিষ্ট বিল্ডিংটি ধ্বসে পড়ে এবং এতে আগুন ধরে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো দল পাকসেনাদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পরও কোনো পাকসেনার আগমনের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় নি৷ একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ একজন গুলিবর্ষণ করে অথবা ভুলক্রমে ফায়ার হয়ে যায়। সাথে সাথে পুরো দল গোলাগুলি শুরু করে। ১০/১৫ মিনিট গোলাগুলি করার পর সবাই প্রত্যাহার করে চলে যায়৷

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত