You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.10 | শৈলকূপা থানা মুক্ত অভিযান, ঝিনাইদহ - সংগ্রামের নোটবুক

শৈলকূপা থানা মুক্ত অভিযান, ঝিনাইদহ

নভেম্বরের শেষের দিকে শৈলকূপাসহ সমগ্র ঝিনাইদহে গেরিলাযুদ্ধ চরম আকার ধারণ করে। ৮ এপ্রিল, ৬ আগস্ট ও ১৭ আগস্ট শৈলকূপা থান আক্রমণ হলেও পরে তা আবার দখলদার বাহিনীর কবলে চলে যায়। শৈলকূপাকে শত্রুমুক্ত করতে ১০ ডিসেম্বর মুক্তিসেনারা মরণপণ করে এগিয়ে যায়। বিকেল চারটা থেকে সিনেমা হল এলাকা, থানা ভবন চত্বর, কলেজ ও পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, কবিরপুর এবং হাসপাতাল এলাকায় খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। ওয়াপদা ভবন থেকে পাকবাহিনী ব্যাপক আক্রমণ চালায়। প্রায় সারারাত যুদ্ধ চলে। এদিকে ৪/৫ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্র বাহিনী সীমান্ত পথে ঝিনাইদহে ঢুকে পড়ে এবং মহেশপুর, কোটচাদপুর এবং চুয়াডাঙ্গায় তাঁরা পৌঁছুলে পাক হানাদাররা কুষ্টিয়ায় ও শৈলকূপায় পালিয়ে আসে। এই সময় বেশ কিছু রাজাকার ও আলবদর শৈলকূপা থানায় হানাদার পাকসেনাদের সঙ্গে আশ্রয় নেয়। ঝিনাইদহ সদর ৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হওয়ার পর একটানা ১২/১৩ ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে ১১ ডিসেম্বর শৈলকূপা হানাদারমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়ে অনন্য অবদান রাখেন, তাঁরা হলেন: রহমত আলী মন্টু, বিশারত আলী, দবির উদ্দিন জোয়ারদার, গোলাম মোস্তফা, আবু মুহাম্মদ, সোনা মোল্লা, আশরাফুল আলম, সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আফজাল হোসেন, মাহবুবুর রহমান, জোরদার আলী, আসাদুজ্জামান জোয়ারদার, মুরাদ, আলম, বাবলু, কোরাতুল আইন কানু ও নজরুল ইসলাম প্রমুখ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ছিনিয়ে আনতে যেসব সূর্যসন্তান আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাঁদের গণকবরগুলো বর্তমানে চরম অবহেলার শিকার। কমান্ড কাউন্সিল দফতরের পেছনে অবস্থিত এমনি এক গণকবর এই অবহেলার চরম সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আলাইপুর ওপয়াপদার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজাকার সিরাজ আলী, আবু তৈয়ব, আকবর ও বিলাত আলী মুক্তিযোদ্ধা মকসেদ আলী, ইউসুফ এবং মিনগ্রাম, গাংগাট ও হাট গোপালপুরের তিনজন অজ্ঞাত মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে গোপাল নামের অন্য এক ব্যক্তিসহ জনতার সামনে চেলা কাঠ দিয়ে পিটিয়ে ভয়ানকভাবে আহত করে। হত্যা করার আগে প্রথমে সিগারেটের জ্বলন্ত আগুনে তাঁদের শরীর ঝলসে দেয়া হয়। পাশবিক অত্যাচার শেষে এই ছয়জন মুক্তিসেনাকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে কবরটি বিশারত ওস্তাদ পাকা করে দেন; কিন্তু আজ তা অবহেলা-অযত্নে পড়ে রয়েছে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত