You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.23 | মিরেরসরাই-বারতাকিয়া রেললাইন অপারেশন, চট্টগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

মিরেরসরাই-বারতাকিয়া রেললাইন অপারেশন, চট্টগ্রাম

ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের ওপর মিরেসরাই থানার বারতাকিয়া বাজারের দক্ষিণ- পূর্বপাশে বারতাকিয়া রেলস্টেশন অবস্থিত। এই স্টেশন ও উত্তরে মিরেসরাই রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনের নিচে এন্টিট্যাংক মাইন বসিয়ে রেললাইন অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল রেলযোগাযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে পাকসেনাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, এতে তাদের মনোবল দুর্বল করে দেয়া এবং মুক্তিকামী জনগণের মধ্যে শুভদিনের আশার সঞ্চার করে তাদের সহযোগিতার হাতকে আরো প্রসারিত করা। ২৩ জুলাই দিবাগত রাত ১টায় হরিমোহন চৌধুরীর বাড়ি থেকে কমান্ডার নিজাম সহযোগী মোঃ শফি, সলিমুদ্দিন, নুরুল ইসলাম, আলী আহমেদ, সাহের আহমেদ (সোর্স), লোকমান এবং আরো কয়েকজনকে নিয়ে এই অপারেশন করার জন্য রওনা হন। তাঁদের সাথে ছিল ২টি স্টেনগান, ২টি পিস্তল, ১টি গ্রেনেড এবং ২টি এন্টিট্যাংক মাইন। তাঁরা অপারেশন স্থানটিতে পৌঁছেন রাত আনুমানিক ২টায়। তাঁরা সেখানে পৌঁছেই স্লিপারের ওপর থেকে পাথর সরিয়ে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ে দুটো মাইন উভয় রেললাইনের নিচে স্থাপন করেন। রাত আড়াইটায় মাইন স্থাপন শেষে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে প্রত্যাবর্তন করেন। পরেরদিন তাঁরা লোকমুখে জানতে পারেন, মাইনগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার পর একটি ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পরে অবশ্য পাক কর্তৃপক্ষ বিচ্ছিন্ন রেললাইনের মেরামত কাজ ১০ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী করে তোলে। লাইনচ্যুত বগির ভেতর কি ছিল তা না জানায় হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য যে, এন্টিট্যাংক মাইনগুলোর ওপর ৪০ পাউন্ড ওজন পড়লেই বিস্ফোরিত হতো। ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় অপারেশনের পরদিন পাকসেনারা মেম্বার জহুরুল হকের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পাকসেনারা রাজাকারদের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল যে, মেম্বার জহুরুল হক মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তাদানকারী একজন সক্রিয় কর্মী পাকবাহিনীর অত্যাচারজনিত আতঙ্ক সত্ত্বেও মুক্তিকামী স্থানীয় জনসাধারণের ভেতরে আনন্দ ও প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছিল এ তথ্যও মুক্তিযোদ্ধারা জেনেছিলেন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত